কলকাতা: সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) প্রয়াত। প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। রবিবার সকালে সঙ্গীত জগতের ‘সরস্বতী’র প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা দেশে। শোকস্তব্ধ বাংলা চলচ্চিত্র জগৎও। শিল্পীর প্রয়াণে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee), পরিচালক তথা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty), অভিনেত্রী তথা সাংসদ মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty), নুসরত জাহান (Nusrat Jahan), অভিনেতা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীও (Soham Chakraborty) শোকজ্ঞাপন করলেন।



মুম্বিয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন লতা। তাঁর মৃত্যুতে টুইটারে প্রসেনজিৎ লেখেন, ‘খবর জানতে পেরে মর্মাহত আমি। লতাজি, আপনার গান চিরকাল আমাদের মনে থেকে যাবে। লতাজির পরিবার, বন্ধু-স্বজন এবং শুভাকাঙ্খীদের আন্তরিক ভাবে সমবেদনা জানাই।’ 



রাজ টুইটারে লেখেন, ‘দেশ কোকিলকণ্ঠী, প্রবাদপ্রতিম শিল্পী লতা মঙ্গেশকরকে হারাল। গোটা দেশ এবং বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকা তাঁর অনুরাগীদের জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত দুঃখের। ওঁর পরিবার এবং বন্ধু-স্বজনদের সমবেদনা জানাই।’



শোজ্ঞাপন করতে গিয়ে সুর সম্রাজ্ঞীর গানের দু’ছত্র তুলে ধরেন মিমি। তিনি লেখেন, ‘নাম গুম জায়েগা, চেহরা ইয়ে বদল জায়েগা, মেরি আওয়াজ হি পেহচান হ্যায় গর ইয়াদ রাখে। হৃদয় বিদারক কিন্তু আমাদের মধ্যে আপনি চিরকাল থাকবেন। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি। কিংবদন্তিদের মৃত্যু হয় না।’



নুসরত টুইটারে লেখেন, ‘স্বর্গ আজ কোকিলকণ্ঠীকে পেল। গোটা দেশ আপনার অভাব অনুভব করবে লতাজি। পরিবার এবং অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’


কাছ থেকে দেখা বা শেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু লতা মঙ্গেশকরের  কণ্ঠে ঠোট নাড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই স্মৃতিই বুকে আঁকড়ে থাকতে চান অভিনেতা তথা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীও। অভিনেতা হিসেবে নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি হলেও, সোহম জানিয়েছেন, আজকাল যে সমস্ত গান বেরোয়, তার থেকে পুরনো দিনের, লতা, আশা, রফি, কিশোরের গাওয়া গানই তাঁর পছন্দের।


এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে সোহম বলেন, ‘‘আমার জীবনের চরম প্রাপ্তি বলতে পারেন। শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করতাম যখন, তখন এক বার লতাজির গাওয়া গানে লিপ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। হয়ত খুব কম লাইন ছিল। কিন্তু অন্তত বলতে পারব যে, আমার অভিনীত ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গান ছিল এবং আমি তাতে লিপ দিতে পেরেছিলাম।’’


আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar: 'সুর-সম্রাজ্ঞী শুধু নন, উনি ছিলেন সঙ্গীত-সরস্বতী', বললেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী


তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি নিজেকে সত্যিই সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। সত্যি বলতে কি, আজকালকার গান আমি পছন্দ করি না। লতাজি, আশাজি, মহম্মদ রফি, কিশোর কুমারের গানই আমার শুনতে ভাল লাগে। এঁদের গান, সুর, কথা, এত ভাবে মন ছুঁয়ে যায়, বোঝাতে পারব না। যত বারই শুনি, মনে হয় যেন প্রথম বার শুনছি এবং আগামী দিনেও শুনব।’’


সুদীর্ঘ শিল্পীজীবনে প্রায় ৩০ হাজার গান গেয়েছেন কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর। শিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশ থেকে অজস্র পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছেন। ভারত সরকার তাঁকে ‘ভারতরত্ন’, ‘পদ্ম বিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ’। ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’-এ সম্মানিত করেছে। বাংলা, হিন্দি, মারাঠি-সহ প্রায় ৩৬টি ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর।


তাঁর মৃত্যুতে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। সঙ্গীতজগতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলা থেকে হৈমন্তী শুক্লা, অজয় চক্রবর্তী, লোপামুদ্রা মিত্র-সহ এনেকেই শোকপ্রকাশ করেছেন।