বাঁকুড়া: ইংরাজিতে এম এ পাস করেছেন। আইনের ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এক সময়ে নাকি রেলেও চাকরী করেছেন তিনি। এমন উচ্চশিক্ষিত যুবক কিনা চুরির দায়ের ধরা পড়লেন পুলিশের হাতে? এমনও সম্ভব? সাধারণত সিনেমায় দেখা যায় এমন গল্প। তবে এবার রিল নয় বাস্তবে ঘটেছে এমন ঘটনা। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। সৌমাল্য চৌধুরী। তিনি এখন চাকরি করেন না। বরং সুযোগ পেলেই এদিক ওদিক চুরি করেন। সম্প্রতি বাঁকুড়ার একটি ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন সৌমাল্য চৌধুরী। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই কার্যত চোখ কপালে উঠেছে পুলিশ আধিকারিকদের। তাঁর শিক্ষা এবং অর্জিত ডিগ্রীর তালিকা দেখে অবাক তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩ জানুয়ারি বাঁকুড়ার কেরানিবাঁধ এলাকায় এক শিক্ষিকার আবাসনে চুরির ঘটনা ঘটে। তার অভিযোগও দায়ের হয় বাঁকুড়া সদর থানায়। ঘটনার তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরা ও অন্যান্য সূত্র মারফত খোঁজ মেলে অভিযুক্ত সৌমাল্যর। গত বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদা থেকে তদন্তকারীরা গ্রেফতার করে বছর ৩৫-এর সৌমাল্য চৌধুরীকে। যুবককে গ্রেফতার করে বাঁকুড়া সদর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। এর পরেই সৌমাল্যর কাহিনী শুনে হতবাক হয়ে যান তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, হুগলিতে বাড়ি হলেও সৌমাল্য বাবা-মা চাকরি সূত্রে আসানসোলে থাকতেন। সেখানেই বড় হয়েছেন সৌমাল্য। পড়াশোনাও সেখানেই। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মী। মা ছিলেন শিক্ষিকা। পড়াশোনা শেষ করে রেলে চাকরি পান সৌমাল্য। কিছুদিন খড়্গপুরে ও তারপর আদ্রা ডিভিশনে চাকরি করেছেন তিনি। চাকরি পাওয়ার কিছুদিন পরেই সৌমাল্যর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। রাঁচিতে তাঁর মানসিক রোগের চিকিৎসাও চলেছিল বেশ কিছুদিন। এই সময়ই তিনি চুরিতে হাত পাকান। জুটে যায় দলও। পুলিশ জানিয়েছে সৌমাল্যর বিরুদ্ধে শুধু বাঁকুড়া জেলাতেই নয় হুগলি, হাওড়া, বর্ধমানসহ বিভিন্ন জেলার থানায় একাধিক চুরির অভিযোগ দায়ের রয়েছে। পুলিশের একাংশ জানাচ্ছেন, ইচ্ছাকৃত নয়, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণেই এমন কাজ করেন সৌমাল্য। তিনি এমন এক ধরনের মানসিক রোগের শিকার যে রোগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে মানুষ। ঠিক ভুল নির্ধারণ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন সৌমাল্য। সে কারণেই জেলায় জেলায় চুরি করে দিন কাটান তিনি।