কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারকে নিশানা করে চলেছেন একের পর এক তৃণমূল নেতা। এবার সকলকে ছাপিয়ে গেলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। সন্তানহারা পরিবারকে বেলাগাম আক্রমণ করলেন তিনি। মদনের বক্তব্য, "পরিষ্কার করে বলুন কী চাই? টাকা? মনে করলে টাকাই চান। সবকিছু টাকা দিয়েই ঢাকা যায়।" নির্যাতিতার পরিবার বাম-বিজেপি-র কথায় চিত্রনাট্য বদল করছে বলেও দাবি করলেন। (Madan Mitra)


কুণাল ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত রায়ের পর এবার মদন মিত্র। আর জি করের নির্যাতিতার পরিবারকে বেলাগাম আক্রমণ করলেন তিনি। নির্যাতিতার পরিবারের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, "আপনি পরিষ্কার ভাবে বলুন, CPM এবং BJP আমাকে যেটা বলছে, সেটা বলছি। তার জন্য আপনি কী চান?" (RG Kar Victim's Family)


মদন আরও বলেন, "শুনেছি ডাক্তারদের ৪-৫ কোটি উঠেছিল। হ্যাঁ, যদি মনে করেন টাকা চান, টাকা চান। সব কিছু টাকা দিয়ে ঢাকা যায়। আমরা শ্রাদ্ধে পড়েছি, কিছু দিতে পারি না টাকা দিয়ে বলে ওম নমো ওম নমো ব্রাহ্মনায়ো অহং দদানি। ছেড়ে দিল টাকা দিয়ে। এটা কী করছেন আপনি? বাংলায় দাঙ্গা লাগাতে চাইছেন আপনারা?"


নির্যাতিতার পরিবার মা-বাবা থেকে অন্যায়ের মদতকারীতে পরিণত হয়েছে বলেও দাবি করেন মদন। তাঁর কথায়, "এতদিন আপনারা প্রত্যেক সন্তানের কাছে মা-বাবা ছিলেন। এখন প্রত্যেক সন্তানের কাছে দায়িত্বশীল অন্যায়ে মদতকারী এবং বাস্তবমূল্যের কিছু দাবি জানানোর জন্য, নিজেদের উপকৃত করতে, ক্ষতিপূরণের জন্য চিত্রনাট্য বদলে দিতে চাইছেন।"


তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, ঘটনার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন নির্যাতিতার মা-বাবা। সে প্রসঙ্গে মদনের বক্তব্য, "বিচারপতি রায় দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেননি। বরং নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে মমতা ফাঁসির আবেদন করেছেন। সেটা কেঁচিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের বিকাশবাবু, যিনি একজন প্রমাণিত, নির্ভুল মিথ্যেবাদী, আপনাদের মুখে মিথ্যে বসিয়ে দিচ্ছে। বিজেপি-র কথা। সিপিএম-এর কথা। তাহলে আপনারা বলুন রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন। অনেক আসন ফাঁকা আছে। দাঁড়িয়ে যান। তাতে অনেকটা ক্ষতিপূরণ হবে। আপনারা কি ছেলেটির ফাঁসি চান? যদি চান, তাহলে কোর্টে গেলেন না কেন? আপনারা মা-বাবা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন আদালতের কাছে। ফাঁসি না চাইলে সিবিাআই-কে বারণ করলেন না কেন? আর যদি ফাঁসি আর ফাঁসি নয়ের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকতে চান, তাহলে কোথায় উপনির্বাচনে খোঁজ করুন। তবে জিততে পারবেন না। চান্স নেই।"


মদনের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক মানস গুমটা। তাঁর কথায়, "একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই। এই নৃশংস ঘটনা দেশে কেন বিদেশেও হয়েছে বলে জানি না। প্রথম থেকে সকলেই বসেছেন, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা ছাড়া কিছু হতে পারে না। ওই পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে, কিছু নেই ওদের। ওদের বুকের যন্ত্রণা বোঝার অবস্থা আমাদের শাসকদলের নেতাদের আছে তো? এরকম একটা যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে এটা আমরা নিতে পারছি না। এই কটূক্তি আর নেওয়া যাচ্ছে না বলতে পারি। এই যন্ত্রণার ভাগীদার হতে চাইলে হন, না হলে বলব এমন কটূক্তি করবে না। শাসকদলও ন্যায় বিচার চেয়ে মিটিং-মিছিল করেছিল। পরে উই ওয়ান্ট জাস্টিস শব্দটা নিষিদ্ধ হয়ে যায় আমাদের রাজ্যে। অনুরোধ করছি, আপনারা ন্যায় বিচার দিতে পারুন বা না পারুন, ওঁদের যন্ত্রণায় আর নুনের ছিটে দেবেন না।"


আন্দোলনকারী আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "দেখুন ওরা যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় হয়েছে, তাতে সভ্য-ভদ্র আচরণ আসা করা যায় না। ওদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হল গুন্ডামি, দুর্নীতি। এর বাইরে ভাবতেই পারে না। তাই যুক্তিসঙ্গত ভাবে যখন বঞ্চনার কথা বলছেন, ওদের দলের মুখোশ খুলে যাচ্ছে, তখনই বিশ্রী আক্রমণ করছে। এটা পচাগলা একটা রাজনৈতিক আদর্শের পরিণতি।"


বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "আসলে তৃণমূল দলটা কী ভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সরকার কী ভাবে চলছে, সেটাকেই ঘুরিয়ে মানুষের সামেন নিয়ে আসছেন মদন মিত্র। নিজের জীবনের উত্থান পতন, রাজনৈতিক অতীত, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানকে তৃণমূলের আঙ্গিকে যেভাবে স্পর্শ করেছেন, তা থেকে বোঝাতে চেয়েছেন, যে দল এবং সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানে টাকা দিয়ে নৈতিক মাপকাঠির মূল্যায়ন হয়। নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছেন এটা। আক্রমণের আঙ্গিকে সেটাই মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আসলে ওঁরা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বলছেন।"