সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া : দুই হাতই কাজ করে না তার। আঙুল বাঁকা। পেন ধরা অসম্ভব। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেই রয়েছে নানরকম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু মনটা তার বড় শক্ত। দৃঢ় তার প্রত্যয়। জীবনে এগিয়ে যেতে গেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই , জানে সে। তাই তো জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাটি সে দিচ্ছে পা-দিয়ে লিখে।


 বাঁ–পায়ে দুই ‌আঙুলের ফাঁকে ধরে পেন। শরীর বেঁকিয়ে লিখে যাচ্ছে সে। সেই কাজটা যে মোটেই সহজ নয়, সে-কথা বলাই বাহুল্য। লিখত লিখতে শরীরটা প্রায় বেঁকেই যায়ে। শরীর নানা চ্যালেঞ্জ দিলেও, জয় করে সকলের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে আদিবাসী বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়া পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় অঞ্চলের খেরোয়াল হেমব্রম। শুধু তাই নয়, ওই পড়ুয়ার মুখও বাঁকা। ভাল করে কথাও বলতে পারে না।


বাঁ পায়ে লিখে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে খেরওয়াল হেমব্রম ।  জঙ্গলমহলের আড়ষা ব্লকের সিরকাবাদ হাই স্কুলের ছাত্র সে। তার পরীক্ষা কেন্দ্র  স্বামী শ্রদ্ধানন্দ  বিদ্যাপীঠ। বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিমি। রোজ এই অবস্থায় এতটা পথ আসা বড়ই মুশকিল। তাই পরীক্ষা কেন্দ্রের হোস্টেলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।  খুব  কষ্ট করেই সংসার চলে তাদের। তাই কিছু অর্থ সাহায্যও করা হয়েছে তাকে। ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পরিবার সূত্রে খবর, জন্মের পর জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিল সে। চিকিৎসা চলাকালীনই তার হাতের আঙুল বাঁকতে শুরু করে। মুখ বেঁকে যায়।  আস্তে আস্তে অকেজো হয়ে পড়ে দুটি হাত।  চিকিৎসার জন্য ছাত্রটিকে ভিন রাজ্যেও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ইতিবাচক ফল মেলেনি। পরীক্ষা কেন্দ্রে তার জন্য ৪৫ মিনিট আলাদা সময় দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


লক্ষ্য স্থির থাকলে প্রতিবন্ধকতা যে  কোনও বাধা নয়, তার বড় প্রমাণ খেরোয়াল হেমব্রম। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে সে।ছোট থেকেই নিজের জীবনে নানা বাধার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সে। হাত অক্ষম বলেই পা দিয়ে লিখেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। ইচ্ছে আরও পড়াশোনা করার ও এগিয়ে যাওয়ার।  


 আরও পড়ুন :                


মাস ঘুরলেই শিবরাত্রি, জেনে নিন মহাদেবকে তুষ্ট করার সঠিক সময় ও নিয়ম