আবির দত্ত, মহেশতলা : ২ মাসে ৩ বার। আবার আক্রান্ত পুলিশ। তাণ্ডবের সামনে রক্তাক্ত উর্দি। জঙ্গিপুর, ভাঙরের পর এবার মহেশতলা। আবারও আক্রান্ত আইনরক্ষক। পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত উর্দি। তাণ্ডবের সামনে 'মরণবাঁচন' অবস্থায় পুলিশ। শুরুতে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না, দাবি স্থানীয় বিধায়কের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও একই অভিযোগ করেছেন। অ্যাকশনে দেরি হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন আক্রান্ত পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। বারবার পুলিশ কেন এত অসহায়? উঠছে প্রশ্ন। 

বুধবার মহেশতলার ঘটনায় পাথরের আঘাতে এবং লাগাতার ইটবৃষ্টিতে আহত হয়েছেন ডিসি পোর্ট হরিকিষাণ পাই। পাহাড়পুর রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, তাঁর কপালের বাঁদিকে তিনটি সেলাই পড়েছে। চিকিৎসকরা ডিসি পোর্টের শরীর-স্বাস্থ্যের অন্যান্য প্যারামিটারগুলি পরীক্ষা করে দেখেছেন সব ঠিক রয়েছে কিনা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন তিনি। তবে তাঁকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় এই হাসপাতালে যান কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মা এবং অন্যান্য অফিসাররা। সিপি  চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানা গিয়েছে। পরবর্তীতে তিনি মহেশতলার রবীন্দ্রনগরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। 

মহেশতলায় রবীন্দ্রনগর থানার সামনেই এদিন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একটি বাইক। আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির কাচ ভাঙা হয় ইট, পাথর ছুড়ে। একাধিক বাড়ির ছাদ থেকে পুলিশের উপর ইটবৃষ্টি করা হয়েছে। পালানোর সময় এক মহিলা পুলিশকর্মীর মাথায় ইটের আঘাত লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। পাথর ছুড়ে ভাঙা হয়েছে পুলিশের গাড়ির কাচ। এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি করা হয় পুলিশের উপর। পাথরও ছোড়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মেটিয়াবুরুজের বিধায়ক বলেছেন, 'বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এগুলো হয়েছে। যারা সমাজবিরোধীরা তারা এসে সুযোগ নিয়ে এসব গন্ডগোল করেছে। পুলিশ অনেক কন্ট্রোল করেছে। অনেক পুলিশ আহতও হয়েছে।' বর্ষীয়ান বিধায়ক একথাও বলেছেন যে, 'শুরুতে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না। সেই হিসেবে পারেনি। পরে পুলিশ এসেছে। নিয়ন্ত্রণ করেছে।' 

এক পুলিশকর্মীকে এদিন মহেশতলায় তাণ্ডব চলাকালীন বলতে শোনা গিয়েছে, 'প্রচণ্ড ইট ছোড়াছুড়ি হয়েছে। আমরা জীবনরক্ষার জন্য লড়াই করে পারছিলাম না, কী করব আমরা? ওরা প্রচুর লোক। কিছু শুনছে না, বুঝছে না। ইট ছুড়ে আমাদের পিছু হঠিয়ে দিচ্ছে। আমরা যত চেষ্টা করছি, ওরা শান্ত হচ্ছে না। আমরা মরণবাঁচন অবস্থায় পড়ে গিয়েছি। কী করব আমরা? যতটা পেরেছি লড়াই করেছি। আমাদের ডিসি সাহেব, সার্জেন্ট আহত হয়েছেন।' এক মহিলা পুলিশকর্মীর মাথাতেও ইট পড়েছে। আক্রান্ত ওই মহিলা পুলিশকর্মী বলেছেন, 'নীচ থেকে পালাতে গিয়েছি। যেখান সেখান থেকে পাগলের মত ইট ছুড়ছিল। আমার মাথায় এসে লেগেছে। তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারেনি। অনেক দেরি হয়েছে। তবু যতটা পেরেছেন, এখানকার এলাকার স্যারেরা যতটা পেরেছেন সামলানোর চেষ্টা করেছেন। ওরা ১০০-১৫০- র উপর লোক। এই কটা ফোর্স নিয়ে অতটা সামলাতে পারে নাকি। ওরা যেখান থেকে পেরেছে দুমদাম ইট মেরেছে। ব্যারিকেড ফেলে দিয়েছে। গাড়ি ভেঙে দিয়েছে।'