কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কে কোন পদে দেখতে চান, তা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে তৃণমূলের একাধিক নেতা বিভিন্ন ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এবার তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ডের' হয়ে পোস্ট করে কি শিক্ষামন্ত্রীর রোষে পড়লেন শাসক দলের শিক্ষক নেতা ? পদ খুইয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন ওই শিক্ষক নেতা।


পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি মইদুই ইসলাম। সেই সংগঠনের তরফ থেকেই আরজি কর-কাণ্ডের আবহে জহর সরকার যখন পদত্যাগ করলেন, সেই সময় সংগঠনের তরফে সমাজ মাধ্যমে একাধিক পোস্ট করা হয়। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যাতে বলিষ্ঠ ভূমিকায় দেখা যায়, তিনি যাতে রাজ্যের হাল ধরেন, এই বেহাল অবস্থা থেকে রাজ্যের সুরাহা হয়, এরকম একাধিক পোস্ট করা হয়েছিল। সেই পোস্টের প্রসঙ্গই উল্লেখ করে আজ শাসক দলের শিক্ষক-নেতা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ, সেই পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁদের ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফোন করে কড়া হুঁশিয়ারি দেন, কেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে এরকম পোস্ট করেছেন তা জানতে চান। শুধু, সেই শিক্ষক নেতাকেই নয়, শাসক দলের অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার সহ সভাপতিকেও একইরকমভাবে হুঁশিয়ারি দেন ক্ষুব্ধ ব্রাত্য বসু। এমনই অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এনিয়ে শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 


এদিকে এই পরিস্থিতিতে আজই অভিযোগকারী মইদুল ইসলামকে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেস কাউন্সিল ফর স্কুল স্পোর্টস অ্যান্ড গেমস কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাম কনভেনর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরিয়ে দেওয়ার পর মুখ খুলেছেন শিক্ষক নেতা। শিক্ষক নেতার অভিযোগ, স্পোর্টসে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখা হয়েছিল, কিন্তু ব্রাত্য বসুর ছবি ছিল না। তাঁর কেন ছবি নেই তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তিনি। 


মইদুল ইসলাম বলেন, "ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেস কাউন্সিল ফর স্কুল স্পোর্টস অ্যান্ড গেমস কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাম কনভেনর পদ থেকে সরানো হল। শিক্ষামন্ত্রী আমাকে সরিয়ে যাকে এনেছেন তাঁকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। অক্টোবর মাসে রাজ্য বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদ আয়োজিত ডায়মন্ড হারবারে মহিলাদের যে কবাডি এবং দাবা খেলা হয়েছিল রাজ্য পর্যায়ে, খেলোয়াড়রা ছিল, তাদের উৎসাহিত করে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেখানে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল। ফ্লেক্স, ব্য়ানারে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন, কেন তাঁর ছবি ব্যবহার হবে না। "


অভিষেক-পন্থী হওয়ায় কি ব্রাত্য বসুর কোপে ?


এই প্রশ্নের উত্তরে মইদুল ইসালম বলেন, এটা হতে পারে। কারণ, বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাঁরা খেলার সঙ্গে যুক্ত, সামাজিক কাজে এবং রাজ্যজুড়ে আমরা যাঁরা সংগঠনে আছি তাঁরা অভিষেকদা-কে আরও সক্রিয়ভাবে যাতে দলে-সরকারে আসেন বা উপ-মুখ্যমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্র দফতর পান, আরজি কর ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁরা বিভিন্নভাবে পোস্ট করেছিলেন। আমরাও সমাজ-মাধ্যমে করেছিলাম। তখন শিক্ষামন্ত্রী খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আমাকে সরাসরি ফোন করে বলেছিলেন, তোমাদের শিক্ষকরা কেন এরকম পোস্ট করছেন অভিষেকদা-কে নিয়ে বা তাঁর ছবি কেন ব্যবহার করছেন। তার বিরুদ্ধে আমি কড়া ব্যবস্থা নেব। একদম সরাসরি থ্রেট দিয়েছিলেন। বারণ করা তো দূরের কথা, ওয়েবকুপার রাজ্য সহ সভাপতিকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, তুমি যে বিবৃতি দিয়েছ সেটাতে কি আমার অনুমতি নিয়েছ ? আমাদের শিক্ষকদেরও থ্রেট করেছিলেন। তাঁদের স্কুলে এসআই ডিআইকে দিয়ে ভিজিট করিয়ে ভয় দেখিয়েছেন।