অমিতাভ রথ, ঝাড়গ্রাম: বিশ্বায়নের যুগে মাটির প্রতি টান কমছে এমনিতেই। গ্রাম বাংলার সাবেক উৎসব, পরব আজ বিলুপ্তির পথে। পেটের জোগান দিতে তাই বিকল্প রোজগারের রাস্তা খুঁজছেন ঝাড়গ্রামের টুসু শিল্পীরা । এক কালে মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti 2022) ঘিরে গ্রাম বাংলায় প্রবল উৎসাহ থাকলেও, এখন আর ফিরেও তাকান না কেউ। তার উপর করোনায় বাজারঘাট একেবারেই ফাঁকা। তাই টুসুর হাট (Tusu Festival) এ বার শুনশান।   


মকর সংক্রান্তিতে ঝাড়গ্রাম তথা জঙ্গলমহলে টুসু পরব অত্যন্ত জনপ্রিয়। টুসু পুতুল বিক্রির পাশাপাশি দু’দিন ধরে চলে  লাঠিখেলা, পটচিত্রের কর্মশালা। কিন্তু করোনায় এ বার বাজার-হাট বন্ধ। জমায়েতে লাগাম চানতে জায়গায় জায়গায় বিধিনিষেধ চালু করেছে প্রশাসন। ফলে কোপ পড়েছে টুসু হাটেও। তাতেই মন খারাপ টুসু শিল্পীদের।


তিন মাস আগে থেকে ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন ব্লকে শিল্পীরা বাড়িতে টুসু তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন হাটে নিয়ে গিয়ে সেগুলি বিক্রি করে দু’পয়সা ঘরে আনার আশায় বুক বাঁধছিলেন তাঁরা। কিন্তু করোনায় বাজার-হাট বন্ধ থাকা। অথৈ জলে পড়েছেন সকলে। ধার-দেনা করে টুসু তৈরিতে হাত দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু বিক্রিবাটা নেই যেখানে, ধার শোধ করবেন কী ভাবে, সেই চিন্তাই এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সকলকে। পরবে নতুন জামা-কাপড় তোলা ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা।


আরও পড়ুন: Guwahati-Bikaner Express Accident: ৯৫-১০০ কিমি গতিতে চলছিল ট্রেন,হঠাৎ ঝাঁকুনি অনুভব করি, জানালেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের চালক


জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় টুসু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোককথা প্রচলিত রয়েছে। টুসু উৎসবে কোথাও গ্রামের ছোট মেয়েদের পুতুল খেলার প্রাধান্য বেশি। কেউ কেউ আবার বলেন, প্রথম দিকে টুসুর কোনও মূর্তির প্রচলন ছিল না। অনেকে আবার মনে করেন, শস্যকে পুর্নজীবন দানের উৎসব হিসেবে টুসু পালন করতেন আদিম জনজাতি মানুষ। ঝুমুর নাচের আয়োজন হতো, মেলা বসত। সঙ্গে পাতে উঠত নানা রকমের পিঠে।


টুসু দেবীর বন্দনার সঙ্গেও এই পরবের সংযোগ রয়েছে বলে শোনা যায়। টুসুর মূর্তিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুতুল থেকে লক্ষ্মী প্রতিমার রূপ নিয়েছে। টুসু ভাসান দেওয়ার আগে রাত জেগে গান ধরেন মহিলারা। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মকে সে সব আর টানছে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।