রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি : বুধবারের পর শনিবার। ফের হড়পা বান জলপাইগুড়ির মাল নদীতে। দেখতে আপাতনিরীহ নদীই ফের একবার ফুঁসে উঠল। এরকমই বিধ্বংসী জলের তোড়ে বুধবার দশমীর রাতে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) মাল নদীতে হড়পা বানে কার্যত খড়-কুটোর মতো ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয় ৮ জনের।


ত্রাতা আরও দুই মহম্মদ


প্রবল জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ার মানুষকে বাঁচাতে মহম্মদ মানিকের মতোই নদীতে ঝাঁপ দেন মেটলি ব্লকের শালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি মহম্মদ তরিফুল ও তাঁর ভাগ্নে স্কুল পড়ুয়া মহম্মদ ফরিদুল। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপ প্রসঙ্গে মহম্মদ তরিফুল ইসলাম বলেছেন, 'হঠাৎ দেখি পিঁপড়ের মতো মানুষ ভেসে যাচ্ছে। সেটা দেখে আমি ও ভাগ্নে ঝাঁপ দিই। ভয় পাইনি বললে ভুল হবে, কিন্তু অনেক মানুষ যেভাবে ভেসে যাচ্ছেন সেটা দেখে নিজেদের আটকে রাখতে পারিনি। শিশু, মহিলা, বয়স্ক সকলে ছিল।' আর স্কুল পড়ুয়া মহম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, 'নদীর যে পাড়ে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখানে প্রায় শ'তিনেক মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু কেউ নদীতে ঝাঁপ দেয়নি। কিন্তু আমরা আর দেখে থাকতে পারিনি। ভয় তো একটু পাচ্ছিল কিন্তু ৮-১০ জনকে উদ্ধার করতে পেরে ভাল লেগেছে। তবে অনেককেই তো বাঁচাতে পারিনি।'


বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কে? 


দশমীর রাতের এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কে? প্রকৃতি না মানুষ? এ’নিয়েই যখন চাপানউতোর চলছে। তখন, কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফের উত্তরবঙ্গের বঞ্চনা বিতর্ক উস্কে দিল বিজেপি। 


'সরকারি টাকায় মোচ্ছব'


কার্নিভাল আয়োজন ঘিরে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'বাবুঘাটে বা কলকাতার কোনও ঘাটে এই দুর্ঘটনা ঘটলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্নিভালের আয়োজন করতেন না। উত্তরবঙ্গে হয়েছে বলেই নাচন-কোদন করবে। সরকারি টাকায় মোচ্ছব। মালবাজারের ঘটনার পর এই কার্নিভালের কী প্রয়োজন ছিল? এটা উত্তরবঙ্গ বলেই করেছে, এই জন্যই তো উত্তরবঙ্গের মানুষ আলাদা রাজ্য চায়। আলাদা থাকতে চায়। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চায়। কোনও সংবেদনশীলতা নেই! উত্তরবঙ্গের কেউ সরকারি টাকায় মুখ্যমন্ত্রীর এই নাচন-কোদন দেখতে যাবেন না।'


প্রসঙ্গত, মালবাজারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জেরে জলপাইগুড়িতে গতকাল পুজো কার্নিভাল বাতিল করা হয়। যদিও রাজ্যের বাকি জেলায় গতকাল দুর্গাপুজোর কার্নিভাল হয়েছে।


আরও পড়ুন- 'মমতার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়েছে’, ট্যুইট বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর