করুণাময় সিংহ, মালদা: নদীবাঁধ সংস্কারেও কাটমানির অভিযোগ। চাঁচলে মহানন্দা নদীর বাঁধ সংস্কারে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বে অভিযোগ,'ঠিকাদারের কাছ থেকে কাটমানি নিয়েছে তৃণমূল। কাটমানি নেওয়ায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হচ্ছে।' যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের।
চাঁচলের ওই এলাকায় ২১০০ মিটার নদীবাঁধের কাজ চলছে। সেই কাজের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধের কাজ করতে পুরনো সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বৃষ্টি হলেই বাঁধ ভেঙে ফেলার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
নদীর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে পাথরের চাঁই, বোল্ডার, বালির বস্তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা অথচ রোজ একটু একটু করে ভাঙছে বাঁধ। ঘরবাড়ি হারানোর আশঙ্কায় ঘুম উড়ছে বাসিন্দাদের। এই ছবি মালদার চাঁচলের গালিমপুর এলাকায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রতিবার বর্ষা এলে মহানন্দার জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে মাটির বাঁধ। সংস্কারের নামে সাময়িকভাবে জোড়াতাপ্পির কাজ হয়। অনুরোধ-উপরোধে কাজ না হওয়ায় এবার বাঁধের ধারেই অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। মালদার চাঁচলের বাসিন্দা আনোয়ারা বিবি বলেন, 'প্রত্যেকবছর এখানে ভাঙন হয়। ভালভাবে বাঁধ সারাই হচ্ছে না, এইভাবে যদি কাজ হয়, ঘরবাড়ি ভেসে যাবে, আমরা কোথায় যাব?'
প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছর মহানন্দা নদীর ২ হাজার ১০০ মিটার বাঁধ সংস্কারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ও সেচ দফতরের তরফে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তা সত্ত্বেও বাঁধ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। ফলে বর্ষায় জলের তোড়ে ফের বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা প্রবল হয়েছে। চাঁচলেরই বাসিন্দা মহম্মদ রানা বলেন, 'এখানে ভাঙন রোধে যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে কোনও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। পুরনো ভাঙাচোরা বোল্ডার ফেলা হচ্ছে। নিম্নমানের জিনিস দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ভাঙন আটকানো যাবে না।'
রাজনৈতিক তরজা:
কিন্তু কেন বারবার একই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসীরা? তা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। চাঁচলের বিজেপি নেতা প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, 'তৃণমূলের নেতারা সর্বত্রই কাটমানি খাচ্ছে, এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। ঠিকাদারের কাছ থেকে কাটমানি নিয়ে সে কাজ করবে কী করে? তাই নিম্নমানের কাজ হচ্ছে।' চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, 'সঠিকভাবে কাজ করতে হবে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বাঁধ সংস্কার নিয়ে গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সেচ দফতরকে এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মালদার জেলাশাসক। প্রতিবছর মহানন্দার ভাঙন চাঁচলের নদীপাড়ের বাসিন্দাদের জীবনে নিয়ে আসে দুর্দশা। কবে সমস্যা মিটবে? সুরাহা পাবেন বাসিন্দারা?
আরও পড়ুন: আমেরিকার মাটি থেকে ছড়িয়ে পড়ল সারা বিশ্বে! কীভাবে? মাতৃদিবসের গোড়ার কথা