করুণাময় সিংহ, আশিস বাগচী, মালদা: মিজোরামে নির্মীয়মাণ ব্রিজ ভেঙে মালদার ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু। ১৮ জনের মৃতদেহ নিয়ে আসা হল গ্রামে। চতুর্দিকে শুধু স্বজনহারানোর হাহাকার (Migrant Workers)। এবারই প্রথম নয়, চার মাস আগে, মিজোরামেই এক ব্রিজ দুর্ঘটনায় পা হারান মালদার রতুয়ার এক পরিযায়ী শ্রমিক। সকলেরই এখন একটাই দাবি, এ রাজ্য়ে কাজের সুযোগ করে দিক সরকার। (Malda News)


চতুর্দিকে শুধু প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা। অসহায়, অনিশ্চিত ভবিষ্য়তের ভাবনা। মিজোরামে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা মালদার বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে ২৩টি তরতাজা প্রাণ। ভিন্ রাজ্য়ে রোজগারের আশায় গিয়ে মূহুর্তে প্রাণ হারান বহু পরিযায়ী শ্রমিক। শুক্রবার ১৮ জন শ্রমিকের নিথর দেহ নিয়ে আসা হয় মালদার বিভিন্ন গ্রামে। (Mizoram Bridge Collapse)

ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চৌদুহার গ্রামের একই পরিবারের ৬ জন। এখন কীভাবে সংসার চলবে, সেই চিন্তায় হা-হুতাশ করছে পরিবার। আর গ্রামে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা এসব দৃশ্য় দেখার পর, আর বিদেশ বিভুঁইয়ে কাজে যেতে চাইছেন না। সরকারের কাছে তাঁদের দাবি, এরাজ্য়ে একটা কাজের সুযোগ করে দেওয়া হোক।


নিহত পরিযায়ী শ্রমিকের আত্মীয় শেখ জয়নাল বলেন, "ছয় আত্মীয় মারা গিয়েছেন। পেটের জোগানের জন্যই কাজে গিয়েছিলেন। এখানে কাজ পেলে কি আর আমরা বাইরে যেতাম? যেতাম না। এখানেই সুখে সংসার করতাম।" ১০০ দিনের কাজ পান কিনা জানতে চাইলে বলেন, "না পাই না। পেলে তো ১০০ দিনের কাজই করতাম! অনেক দুর্ঘটটা হল। এই ভয়ে আমরা আর যেতে চাইছি না। সরকারের সাহায্য় চাইছি কাজের জন্য। নিজের এলাকায় কাজ করতে চাই।"


এবারই প্রথম নয়, কয়েক মাস আগে, এই মিজোরামেই কাজের খোঁজে গিয়ে, দুর্ঘটনায় পা হারান মালদার রতুয়ার চৌদুহার গ্রামেরই এক যুবক। এবার মিজোরামের যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, চার মাস আগে তার থেকে ১৫০২০ কিলিমিটার দূরে আর একটি দুর্ঘটনা ঘটে। পা বাদ যায়। এক শ্রমিকের। 


আরও পড়ুন: Aroop Biswas: ১৭ মাস ধরে বেতন নেই ISRO-তে! বিধানসভায় অভিযোগ অরূপের, পাল্টা DA-র কথা মনে করাল BJP


ওই শ্রমিকের নাম শিস মহম্মদ। মাধ্য়মিক পাস করার পরই, কাঁধের উপর এসে পরে পরিবারের ভার। সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে পাড়ি দেন ভিন রাজ্য়ে। মাস চারেক আগে, মিজোরামে একটি ব্রিজ তৈরির কোম্পানির আন্ডারে কাজ করছিলেন। বুধবার যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে সেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। তাতে দু'জনের মৃত্য়ু হয়। পাঁচ জন আহত হন। তার মধ্য়ে এই যুবকের পা টাই বাদ যায়।

শিস মহম্মদের দাবি, কেন্দ্র বা রাজ্য়, কোনও সরকারের থেকেই কোনও সাহায্য় পাননি তিনি। বলেন, "কাজ করতে করতে দুর্ঘটনা ঘটে। ব্রিজ ভেঙে পড়েছিল। তার পর আমার পা-টা এমন হয়।  ওখানে দু'জন মারা গিয়েছিল। আমরা পাঁচ জন আহত হই। ওখান থেকে আমাকে বাড়ি পাঠিয়েছে। বলা হয়েছিল চিকিৎসার খরচ, ওষুধ, বেতনের টাকা দেবে। এখনও পর্যন্ত কিছু পাইনি। রেলের তরফ থেকেও কোনও সাহায্য় করা হয়নি।


রতুয়ার এক বাসিন্দা জানান, গ্রামের দু-আড়াইশো পরিবার থেকে অন্তত দু'-তিন জন করে বাইরে কাজে যায়। ১০০ দিনের কাজ মেলে না। তার জন্যই যেতে হয় বাইরে। দিন কয়েক আগেই পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, "আপনারা কাজের জন্য বাইরে যাবেন না। এখানে কাজ আছে। আমরা ১ লক্ষ করে টাকা দিচ্ছি। দোকান খুলুন।"


যদিও বাস্তব পরিস্থিতি আলাদা বলে দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, "একটি বাড়িতে গিয়ে দেখলাম, পরিবারের ছেলেটি পড়াশোনায় খুব ভাল। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছিল। কিন্তু তাকেও মিজোরামে কাজ করতে যেতে হয়েছে। এই বাংলায় কোথায়, কত পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পৃথক মন্ত্রক খোলা উচিত। সেখানে সব তথ্য় সংরক্ষণ করতে হবে। আজ পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি।"


হতদরিদ্র পরিবার। দু-মুঠো পেটের ভাত জোগাড় করতে নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে হয়। যেতে হয় ভিন্ রাজ্য়ে।
এর কি কোনও সুরাহা কোনওদিন হবে? উত্তর অধরা।