অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: চাষবাসে তেমন লাভ নেই বলে রব উঠছে বহু দিন থেকেই। শুধু রব ওঠাই নয়, বাস্তবিকই চাষবাসের পরিস্থিতি তেমন ভাল নয়। মূল্যবৃদ্ধির জেরে চাষের সরঞ্জামন কিনতে নাভিশ্বাস উঠলেও, ফসল বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য দাম পান না কৃষকরা। পড়ে থেকে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। তাই প্রথাগত চাষে আর যে তেমন লাভ নেই, তা বুঝে গিয়েছেন কৃষকরা। তাই বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন অনেকে। মালদায় কমলালেবু চাষের যে হিড়িক দেখা দিয়েছে, তা এই বিকল্প উপায়ের মধ্যেই পড়ে। (Malda News)
চিরাচরিত পদ্ধতিতে, বাংলার ফসল চাষের যে চিরাচরিত প্রক্রিয়া চলে আসছে, তাতে লাভ হচ্ছে না অনেক দিন ধরেই। তাই বিকল্প উপায়ের সন্ধানে অনেক দিন ধরেই হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন কৃষকরা। এর আগে, বাদাম, আনারস এমনকি আরবের খেজুরও চাষ করতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। এবার সেই তালিকায় জায়গা করে নিল কমলালেবু। খাপছাড়া ভাবে ইতিউতি গাছ পুঁতে দেখছেন অনেকে। অনেকে আবার জমিতেই চাষ করে দেখছেন। (Orange Farming)
পুরাতন মালদার দীপক রাজবংশী এমনই এক কৃষক। প্রথাগত ফসল চাষ থেকে সরে বিকল্প উপায় খুঁজছিলেন তিনি, আর তাতেই কমলালেবু চাষের কথা মাথায় আসে তাঁর। বেশ কিছু দিন ভাবনা-চিন্তার পর মহিষবাথানী অঞ্চলের গোয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দীপক শেষ পর্যন্ত কাজে নেমেই পড়েন। নিজের বাড়ি লাগোয়া জমিতে কমলালেবু চাষ করেন দীপক। দিব্যি তাতে ফসল ফলতেও শুরু করে দিয়েছে। আপাতত পরীক্ষা নিরীক্ষাই চালিয়ে যাচ্ছেন দীপক। তবে শীঘ্রই মালদার বাজারে নিজের ফলানো কমলালেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।
পুরাতন মালদার মাটির কিছুটা শক্ত প্রকৃতির, একই সঙ্গে পাথুরেও। পাহাড়ের মাটির সঙ্গে পুরাতন মালদার মাটির মধ্যে সাদৃস্য় রয়েছে বেশ। কয়েক বছর আগেই তাই কমলালেবু চাষ করার কথা মাথায় আসে দীপকের। পরীক্ষামূলক ভাবে নিজের বাড়িলাগোয়া ১০ কাঠা জমিতে মতো কমলালেবু চাষ করতে উদ্যোগী হন। আজ থেকে চার বছর আগে নদিয়ার রানাঘাটের একটি নার্সারি থেকে কিনে আনেন ১০টি ভুটানের কমলালেবুর গাছ।
জমনিতে চারাগাছ বসিয়ে কাজে নেমে পড়েন দীপক। গাছের পরিচর্যা করতেন নিজের হাতেই। ১০টির মধ্যে একটি চারাগাছ পরবর্তীতে মারা যায়। তবে দীপকের হাতের যত্নে বাকি ন'য়টি গাছ শুধু বেঁচেই যায় না, হৃষ্টপুষ্টও হয়ে ওঠে। সুস্থ-সবল ভাবে বেড়ে ওঠে গাছগুলি। বর্তমানে এক একটি গাছের উচ্চতা সাত ফুটের বেশি। এবার প্রায় দেড় কুইন্টাল কমলালেবু ফলেছে ওই ন'টি গাছে। দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর থেকে আকারে ছোট হলেও, স্বাদে কিন্তু মিষ্টি। তবে ফলের আকার মনের মতো হয়বি দীপকের। তাই এবারে যে ফসল ফলিয়েছেন, সেটিকে বাজারে পাঠানোর কথা ভাবছেন না তিনি। আরও খানিকটা সময় নিয়ে, একেবারে নিখুঁত আকারের কমলালেবুই বিক্রির কথা ভাবছেন বরং।