করুণাময় সিংহ এবং অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: যে চোখ দিয়ে কর্মচারীদের ভয় দেখাচ্ছেন, সেই চোখগুলো তুলে নেব। DA আন্দোলনকারীদের এই ভাষাতেই হুঁশিয়ারি দিলেন, মালদার তৃণমূল সভাপতি ও মালতিপুরের বিধায়ক আবদুল রহিম বক্সী। তৃণমূলের গোটাটাই তো চুরি দুর্নীতিতে যুক্ত, কটাক্ষ বামেদের। তৃণমূলকে রাজ্য থেকে উপড়ে ফেলবে মানুষ। আক্রমণ শানাতে ছাড়েনি বিজেপিও।


বকেয়া DA-এর দাবিতে ২ মাসের উপর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। সোমবার ৬৭ দিনে পড়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আন্দোলন। এদের উদ্দেশেই কখনও, চোর-ডাকাত, তো কখনও চিরকুটে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ। কখনও সরাসরি CPM'র লোক বলে, কটাক্ষ উড়ে এসেছে তৃণমূলের দিক থেকে। ফাইল খুঁজে বের করা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। 


এবার DA আন্দোলনকারীদের চোখ তুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন, মালদার জেলা তৃণমূল সভাপতি ও মালতিপুরের বিধায়ক আব্দুল রহিম বক্সী। তিনি বলেন, 'যারা সরকারি কর্মচারীর নাম করে, যুক্ত মঞ্চের নাম করে, আমাদের সরকারি কর্মচারীদের চোর বলার চেষ্টা করছে। যে চোখ দিয়ে, কর্মচারীদের ভয় দেখাচ্ছেন সেই চোখগুলো তুলে নেব।' 


তৃণমূল নেতার এই হুঁশিয়ারির পাল্টা জবাব দিয়েছেন আন্দোলনকারীরাও। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ প্রতিনিধি কিঙ্কর অধিকারী বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় চোর ডাকাত চিরকুটে চাকরি বলে আক্রমণ করেছেন, তার নিচুতলার বা অন্যান্য লোকেরা একই ভাষায় তার থেকেও খারাপ ভাষায় আক্রমণ করবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা সরকারি কর্মচারীরা শিক্ষকরা এমন কোন ভাষা ব্যবহার করি না যেটা খারাপ।' 


সোমবার মালদায় তৃণমূলের সংগঠন- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে, DA-এর আন্দোলনকারীদের নিশানা করেছেন মালদার তৃণমূল সভাপতি। নিশানায় ছিল বিরোধী দলগুলিও। 


আরও পড়ুন, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বোমা! রাতের রিষড়ায় তুমুল অশান্তি, থমথমে এলাকা


তৃণমূল কংগ্রেস, মালদার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক ও জেলা সভাপতি আব্দুল রহিম বক্সী বলেন, 'কারা কোথায় বড় মিছিল করে নিল, সেটা দেখে আমরা হতাশ হয়ে গেলাম। ক'জন লোক গিয়ে, তাঁরা সেখানে কিছু সওয়াল করে নিল। আমরা ভয় পেয়ে গেলাম, সেটা নয়। সরকারি কর্মচারীদের একটা নিজস্বতা আছে, সরকার থাক বা না থাক, সরকারি কর্মচারীদের একটি নিজস্বতা আছে।' 


সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধি দীপল বিশ্বাস বলেন, 'আমরা কাউকে হুমকি দিইনি। আপনারা দেখাতে পারবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে মঞ্চ বেঁধে, কার্যত সেখান থেকেই বিরোধী মঞ্চ বানিয়ে ছিলেন। আমরা এই ধরনের কোন মন্তব্য করব না, যেটা রাজনৈতিক। প্রয়োজন হলে আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।' 


মালদা উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, 'সরকারি কর্মচারীরা নিজেদের দাবি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন, এটা অধিকার। সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য যে হুমকি দিচ্ছে, সেই অধিকার কে দিল। তিনি যে চোখ উপড়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, তৃণমূলকে রাজ্য থেকে উপড়ে ফেলবে মানুষ।' 


মালদার সিপিএম-এর জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, 'এসব কথা বললে তো মামলা হওয়া উচিত। দল পাল্টে তৃণমূল করছেন, আসলে বাজার গরম করতে চাইছেন, অতীতে দেখেছি জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কর্মচারীদের বলতেন আমার সহকারীবৃন্দ, এই সংস্কৃতি তখন ছিল, এখন পাল্টে যাচ্ছে। আসলে তৃণমূল গোটাটাই চুরি-দুর্নীতিতে ভরে গেছে।' 


সব মিলিয়ে বকেয়া DA নিয়ে রাজনীতির লড়াই থামছে না।