করুণাময় সিংহ, মালদা: এখানে পুজোর উপকরণ বলতে গঙ্গাজল আর কাঁচাদুধ (Mahashivratri 2024) ।ইংরেজবাজার (Malda Mahashivratri 2024) ব্লকের অমৃতি শিব মন্দিরের 'ভোলে বাবা' তাতেই তুষ্ট। শুধু ভক্তিতে হতে হবে নিখাদ। তা হলেই মনস্কামনা পূর্ণ হবে, বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা। আজ নয়, বাংলার ১৩৫৩ সন থেকে এমনই বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দিরের সঙ্গে। শিবচতুর্দশী উৎসবের মুখে তাই তুমুল তোড়জোড় এলাকায়।
ইতিহাস...
বর্তমানে অমৃতি শিব মন্দিরের দায়িত্বে থাকা প্রবীণ কর্তা ধ্রুবকুমার দাস বলেন,'বাংলার ১৩৫৩ সনে এই শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দাস পরিবারের পূর্বপুরুষ মহানন্দ দাস। তিনি এলাকার জমিদার শেঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্বপ্নাদেশে মহাদেবের দর্শন পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর হাত দিয়েই এই মন্দির পুজো শুরু। মহানন্দবাবু নিজেই সেবায়েত ছিলেন। ভবিষ্যতে যাতে কোনও দিন অমৃতি শিব মন্দিরের পুজো বন্ধ না হয়, তাই দেবত্ব সম্পত্তি হিসেবে তিনি মন্দিরের নামে ৪০০ বিঘা আম বাগান এবং ফসলি জমি রেখে গিয়েছেন। সেই সম্পত্তি থেকেই যে আয় হয়, তা ফি বছর মহাদেবের উৎসব উপলক্ষে খরচ করা হয়ে থাকে।' পূর্বপুরুষের মৃত্যুর পর বংশপরম্পরায় তাঁর উত্তরসূরিরাই পুজোর আয়োজন করে আসছেন।
কী কী হয়?
মন্দিরের কর্মকর্তা আরও বললেন, 'শুধু মালদা নয় , বিহার, ঝারখান্ড, অসম থেকেও বাবার মাথায় জল ঢালতে বহু ভক্ত আসেন। শিবরাত্রির দিন কয়েক লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়। মানিকচকের গঙ্গা ঘাট থেকে জল নিয়ে এসে এই মন্দিরে ঢালেন ভক্তেরা। সেই প্রাচীন কাল থেকে এই রীতি চলে আসছে। শিবরাত্রি উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক গঠনমূলক কর্মসূচিরও আয়োজন করা হয়। মেলা চলে, টানা পাঁচদিন ধরে।' এই মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত শান্ত বিলাস ওঝা। তিনি বললেন, 'অত্যন্ত জাগ্রত মহাদেবের এই মন্দির। মহাদেবের বিগ্রহের পাশাপাশি শিবলিঙ্গ রয়েছে। এই মন্দিরে অনেক ভক্ত এসে মানত করেন। পরবর্তীতে মনস্কামনা পূরণের পর আবারও মহাদেবের কাছে এসে গঙ্গাজল ও দুধ দিয়ে সেবা করে যান। তাই তো প্রতিবছর ভক্তদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অমৃতি শিব মন্দিরের পুজো এবং মেলা ঘিরে পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।' তবে পুজো এবং মেলা পরিচালনায় কোনও অর্থ সংগ্রহ করা হয় না। মন্দিরের ব্যক্তিগত সম্পত্তির জমানো টাকা থেকেই শিব পুজোর উৎসব এবং মেলা পরিচালনার খরচ করা হয়। শুধু তাই নয়, এই পুজো ঘিরে গ্রামবাসীদের মধ্যে পংক্তিভোজনেরও আয়োজন করে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রাত পোহালেই সেই পুজো, সেই উৎসব। তোড়জোড়ের তুমুল ব্যস্ত সকলে।
আরও পড়ুন:মালদা উত্তরের বিজেপি প্রার্থীকে 'চোর, বেইমান, ভেলকিবাজ' বলে আক্রমণ TMC বিধায়কের !