করুণাময় সিংহ, অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: পেটের জ্বালা মেটাতে পাঞ্জাবে গিয়েছিলেন বঙ্গ সন্তান। তখনও জানতেন না সেই শেষবারের মতো ছিল বাড়ির চৌকাঠ পেরোনো। পেটের ব্যথায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অস্ত্রোপচারেও শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যু হয় ওই পরিযায়ী শ্রমিকের। এদিকে মর্মান্তিক ঘটনার এখানেই শেষ নয়।সাত দিনের বকেয়া বিল না মেটালে মৃতদেহ ছাড়তে চাইছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরেই নিজেদের শেষ সম্বল ১৬ কাঠা জমি বন্ধক দিয়ে ভিন রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ ঘরে ফেরাল পরিবার !
'এলাকায় কাজ নেই', পেটের জ্বালায় পঞ্জাবে
এলাকায় কাজ নেই। সাত দিন আগে পঞ্জাবে রাইস মিলের কাজে গিয়েছিলেন চাঁচল ১ নং ব্লকের ধঞ্জনা গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস আলী (৫০)। কিন্তু গিয়ে কাজে যোগ দিতে পারেননি। হঠাৎ পেটের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।সহকর্মীরা স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন ইলিয়াসকে।সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়।কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তাঁর।
পাঞ্জাবের হাসপাতাল থেকে দেহ ফেরাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত বাংলার পরিবার
কিন্তু সাত দিনের বকেয়া বিল না মেটালে মৃতদেহ ছাড়তে চাইছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সহকর্মীদের কাছ থেকে এই খবর শুনে মাথায় বাজ পড়ে ইলিয়াসের পরিবারের। একদিকে মৃত্যুর দুঃসংবাদ। অন্যদিকে বকেয়া বিল মেটানোর চাপ।পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ইলিয়াস।এছাড়া পরিবারের রয়েছে স্ত্রী, দুই নাবালক সন্তান এবং এক যুবতী মেয়ে।
'মৃত্যুর পরেও সাহায্য করল না প্রশাসন'
শেষে বকেয়া বিল মেটানোর জন্য রাতারাতি নিজেদের শেষ সম্বল ১৬ কাঠা জমির বিনিময়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সত্তর হাজার টাকা ধার নিয়ে ইলিয়াসের দেহ ফেরানোর ব্যবস্থা করেন তাঁর অসহায় স্ত্রী।পরিবারের লোক এবং প্রতিবেশীদের অভিযোগ, 'এলাকায় কাজ নেই বলেই তো বাইরে যেতে হয়েছে।কিন্তু সেখানে গিয়ে এই করুণ পরিণতি।জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন কোনও সাহায্য করল না।শেষ সম্বলটুকুও চলে গেল। '
আরও পড়ুন, অগ্নিগর্ভ সন্দেশখালি, বন্ধ করা হল ইন্টারনেট পরিষেবা
'এবার সরকার অন্তত কিছু সাহায্য করুক, নয়তো এই পরিবারকে পথে বসতে হবে'
তাঁদের দাবি, এবার সরকার অন্তত কিছু সাহায্য করুক।নয়তো এই পরিবারকে পথে বসতে হবে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বৃহস্পতিবার ভোররাতে পাঞ্জাব থেকে শবদেহবাহী গাড়িতে তাঁর দেহ আনছে সহকর্মীরা।শনিবার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের সকলেই।মালদার জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন,বিষয়টি বিডিও কে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে । প্রয়োজনে সমস্ত রকম সরকারি সাহায্য করা হবে বলে জানান তিনি।