করুণাময় সিংহ, মানিকচক : ভূমিক্ষয় আটকে নদীবাঁধকে শক্ত রাখে যে গাছ, সরকারি উদ্য়োগে লাগানো সেই গাছই চুরি হয়ে যাচ্ছে নদীবাঁধ থেকে ! আর এতেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন মালদার মানিকচকের ভুতনির বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, অবাধে চলছে গাছ চুরি, দুর্বল হচ্ছে নদীবাঁধ। তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। 


কত পথ চলেছি আমি, জানে শুধু দুপাশের বন, আর জানে ঝরাপাতাগুলো, শুধু জানে না তোমার এ মন। গানের কথা গুনগুন করে। কিন্তু, পথিকের পথ চলার হিসাব আর কতদিন রাখতে পারবে পথের ধারের এইসব 'সবুজ সেনানীরা' ? তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে রয়েছেন মালদার মানিকচকের ভুতনির শঙ্করটোলা এলাকার বাসিন্দারা।


গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিনের পর দিন নদীবাঁধ থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে সরকারি গাছ। রাতে অবাধে চলছে সরকারি গাছ কেটে পাচার। যে গাছের শেকড় ভূমিক্ষয় রোধ করে, সেই গাছ কেটে নেওয়ায় দুর্বল হচ্ছে নদীবাঁধ। মনিকচকের শঙ্করটোলার বাসিন্দা আবীর আলি বলেন, সরকারি যে গাছ রয়েছে ফরেস্টের, তা কেটে রাতে পাচার হচ্ছে। এই করে বাঁধটা নষ্ট হয়ে গেল। গাছ চুরি হচ্ছে যেভাবে, বাঁধ পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। প্রশাসনকে বলব আইনি ব্যবস্থা নিতে। মাঝেমধ্যেই দেখি, গাছ ছিল, আজ আর নেই।


একদিকে গঙ্গা, আরেকদিকে ফুলহার, দুই নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত ভুতনি। সেখানকার ভাঙন কবলিত এলাকা শঙ্করটোলা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নদীবাঁধে ভূমিক্ষয় রোধ করতে প্রায় দু'দশক আগে মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে বনসৃজন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তাতে সরকারি উদ্যোগে নদীবাঁধ বরাবর মেহগনি, শিশু, আকাশমণির মতো গাছ লাগানো হয়।

অভিযোগ, সেইসব গাছ বড় হতেই এখন তাতে নজর পড়েছে কাঠের চোরাকারবারিদের। বিজেপির অভিযোগ, শাসকদলের মদতেই দুষ্কৃতীরা অবাধে সরকারি গাছ ধ্বংস করছে। যদিও তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী তা মানতে চাননি।


দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, বড় বড় গাছ তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা শাসকদলের মদতে কাটছে। পুলিশ-প্রশাসন, বন দফতর উদাসীন। দলদাসে পরিণত হয়েছে। এভাবে চললে ভবিষ্যতে ভুতনি নদীগর্ভে চলে যাবে। অভিযোগ করে লাভ নেই। ওপর থেকে নীচতলা পর্যন্ত টাকা খাওয়ানো আছে।


যদিও মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ও তৃণমূলনেত্রী কবিতা মণ্ডল বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতির জানা নেই। অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যায় না। যদি কেউ এরকম করে থাকে ব্যবস্থা নেব। তৃণমূলের কোনও লোক জড়িত না। বিরোধীরা বিরোধীদের কথা বলবে। আমরা দেখে ব্যবস্থা নেব।

বিতর্কের মুখে সাফাই দিয়েছেন বন আধিকারিক। মালদার রেঞ্জার সুজিতকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, সরকারি গাছ কাটা হচ্ছে। হাতেনাতে ট্রাক্টর-সহ একজনকে গ্রেফতার করি। যে সব দুষ্কৃতী গাছ কাটছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আবার অভিযান হবে।

প্রকৃতিকে বিপন্ন করে, মানুষের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া এই চক্র আর কতদিন সক্রিয় থাকবে? এখন এটাই প্রশ্ন শঙ্করটোলার বাসিন্দাদের।