অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: অবশেষে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে নিজের ঘরে ফিরল কিভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম হামিদ পারভেজ। কিন্তু এখনও পিছু ছাড়ছে না যুদ্ধের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। চোখের সামনে দেখেছেন ইউক্রেনীয় পরিবারকে গুলি করে মারছে রুশ সেনা। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের মাসুম হামিদ রেজা। 


ইউক্রেনের কিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া সে। যুদ্ধ শুরু দিন থেকেই বাঙ্কারে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছে। বাইরে অবিরাম গোলাবর্ষণ। অথচ বেরিয়ে খাবার কেনার উপায় ছিল না। বাঁচার তাগিদে দেশের পতাকা আঁকড়ে বেরিয়ে ১১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কোনওমতে পৌঁছন হাঙ্গেরি সীমান্তে। গতকাল বাড়ি ফিরেছেন। ডাক্তারি ডিগ্রি মিলবে তো এই নিয়েই চিন্তায় ইউক্রেন ফেরত মেডিক্যাল পড়ুয়া। 


বাংলায় ফিরে হামিদ জানিয়েছেন, বাঙ্কারের মধ্যে অনিশ্চিত ভাবে গাদাগাদি ভিড়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। যোগাযোগ ছিন্ন ছিল বাড়ির সঙ্গেও। বাঙ্কারে থেকে শুনতে হয়েছে একের পর এক গোলা বর্ষণের আওয়াজ। তখন সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত খাবার,জল। পরে বাঁচার তাগিদে নিজেদের উদ্যোগেই বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ভারতের পতাকা নিয়ে ১১ কিলোমিটার হেঁটে কাছের স্টেশন। চারদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। 


তিনি জানিয়েছেন, দল করে হেঁটে কাছের স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনে উঠতে হয়েছে। সেখানেও ভিড়। আতঙ্ক সকলের চোখে মুখে। সাহায্য করেছে ইউক্রেনীয় কিছু রেস্টুরেন্টের লোকজন। কোনক্রমে সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরি এসেছেন। সেখানে হাঙ্গেরি সরকারও সাহায্য করেছে। এরপর মুম্বই পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। পরে মুম্বই থেকে কলকাতা হয়ে একেবারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতেই মাসুনের বাবা মোহাম্মদ মোমিনুদ্দিন, মা হামেদা খাতুন গোটা পরিবার সহ মাসুমকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। 


মাসুমকে সংবর্ধনা জানাতে এস ডি পি ও, সঙ্গে ছিলেন আইসি সঞ্জয় কুমার দাস, ও অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা তার বাড়িতে এসেছিলেন। অন্যদিকে মাসুমকে সংবর্ধনা দিলেন জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান ও জম্মু রহমান। মাসুম বাড়ি আসছে শুনেই পাড়া-প্রতিবেশীরাও মাসুমকে দেখতে ভিড় জমান। তবে ভবিষ্যত ভাবনা রয়েছে। কীভাবে এমবিবিএস কমপ্লিট করা যাবে সেটাই চিন্তার। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন রেখেছে মাসুম যাতে তাঁদের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি তাঁর এই আবদনে সাড়া দিয়ে মাসুম ও তাঁর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল নেতা বুলবুল খান ও জম্মু রহমান। তবে ঘরে ফিরে স্বস্তি পেলেও যুদ্ধের সেই ছবি এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠছে মাসুমের।