কলকাতা : 'কলকাতা পুলিশ যদিও সেরা, তাও যদি আন্দোলনরত পড়ুয়া ও নির্যাতিতার পরিবার তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে এই মামলা সিবিআইকে দিয়ে দেওয়া হবে।' সোমবার আরজি করের ঘটনায় নির্যাতিতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কলকাতা হাইকোর্ট এই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিলেও, এদিন নিজের অবস্থানেই অনড় রইলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনও তিনি বললেন, 'কলকাতা পুলিশের যে টিমকে আমরা কাজে লাগিয়েছিলাম সেটা ওয়ান অফ দ্য বেস্ট টিম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।' যদিও তরুণী চিকৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। 


আরজি করের ঘটনার পর পুলিশের পদক্ষেপ এবং কীভাবে তারা তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন আমি ঝাড়গ্রামে ছিলাম। ঝাড়গ্রাম থেকে ফেরার পথে গাড়িতে খবরটা পেলাম। জানতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। ওঁরা তখন আমাকে রিপোর্ট করলেন যে তাঁরা হাসপাতালে আছেন। ওঁদের বাবা-মাও এসেছেন। আমি বাবার সঙ্গে কথা বললাম। বাবা বললেন একটু মায়ের সঙ্গেও কথা বলুন। মায়ের সঙ্গেও কথা বললাম। তাঁদের বলেছিলাম, পুলিশ তদন্ত করবে এবং আমি ওঁদের ফাঁসি চাই। আমি সেই কথা প্রথম দিন থেকে বলে এসেছি। আজও আমি এটাতে স্টিক করি। আমি বলেছিলাম, আমি আপনাদের বাড়ি খুব শীঘ্রই যাব। যেহেতু ওঁদের একটা কাজ ছিল। মৃত্যুর পর পারিবারিক কাজ থাকে। সেই সময় ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। রবিবার সম্ভবত ওঁদের কাজ ছিল। তাই সোমবার দিন আমি তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ঘটনা ঘটেছিল সম্ভবত শুক্রবার। আমি ওঁদের বাড়ি সোমবার গিয়েছিলাম। ততক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ..আমার সঙ্গে ১০০ বার কথা হয়েছে। মিনিট টু মিনিট। আমরা সারারাত ঘুমাইনি। আমার সঙ্গে পুলিশ কমিশনার রাত ২টো পর্যন্ত কথা বলেছেন। এমনকী তাঁর মৃতদেহের যতক্ষণ না পর্যন্ত সৎকার হয়েছে, পুলিশ এসকর্ট করে মৃতদেহ নিয়ে গেছে। সারারাত জেগে। তারা সিসি টিভি থেকে শুরু করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ডাকা থেকে শুরু করে, ভিডিওগ্রাফি করে রাখা থেকে শুরু করে, তার পরের দিনও ডিনিএ টেস্ট, নমুনা সংগ্রহ...গত এক মাসের সিসি টিভি ...কে আসছে, কে যাচ্ছে জানার জন্য ১৬৪ জনকে নিয়োগ করেছিল তারা। ১২ ঘণ্টার মধ্যে আসল যে খুনি তাকে জেরা করে তার প্রমাণ সংগ্রহ করে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমি রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। একটা তদন্ত করতে একটু সময় দিতে হয়। আমি স্বাস্থ্য দফতরকেও বলেছিলাম তদন্ত করতে। তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে বলা যায় না। ৪৮ ঘণ্টা তদন্ত করে যখন জানাল তখন সবাইকে ওখান থেকে বদলি করে দিলাম।"


তিনি আরও বলেন, "সিবিআইকে যা যা সহযোগিতা করার এই কেসে আমরা পুরোটাই করব। কারণ, আমাদের কোনও লেনাদেনা নেই। আমরা চাই, এই পাশবিক হত্যার বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই তারা দোষী ব্যক্তিকে ফাঁসি দিক। আমরা রবিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিলাম। আমি তো সোমবার তাদের বাড়ি গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, রবিবারের মধ্যে যদি সবটা তদন্ত শেষ না হয়, আমি সিবিআইকে দিয়ে দেব। ৩৪ জনকে পুলিশ ডেকে কথা বলেছিল শুনেছি। আরও অনেকে ওদের লিস্টে ছিল। তাদের এই চার-পাঁচদিনের মধ্যে ডেকে কথা বলত। সেই সুযোটা তারা পায়নি, তাদের দেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিআইকে দিয়েছে, আমার কোনও আপত্তি নেই। আমাকে দিতে হত যদি পুলিশ না করতে পারত। কিন্তু মনে রাখবেন, কলকাতা পুলিশের যে টিমকে আমরা কাজে লাগিয়েছিলাম, সেটা ওয়ান অফ দ্য বেস্ট টিম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।"


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।