কলকাতা: মহালয়ার আগের দিনই পর পর বেশ কয়েকটি প্যান্ডেলের উদ্বেধন করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে উঠল। প্যান্ডেল উদ্বোধন করতে গিয়ে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে কাপড়ে মাথা ঢাকেন মমতা। সেই নিয়ে তাঁকে তীব্র কটাক্ষ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতা মাথায় 'হিজাব পরেছেন' বলে মন্তব্য করলেন তিনি। শুধু তাই নয়, মমতা হিন্দুদের আস্থায় আঘাত হেনেছেন বলেও অভিযোগ তুললেন। (Mamata Banerjee)
রাত পোহালেই মহালয়া। তার আগে, শনিবার একে একে হাতিবাগান, টালা প্রত্যয় এবং শ্রীভূমির প্যান্ডেল উদ্বোধন করেন মমতা। হাতিবাগান সর্বজনীন মাতৃ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করতে যখন ঢুকছেন মমতা, সেই সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সেই সময় পাশ থেকে চাদর চান মমতা। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আমার চাদরটা দাও। গলা ব্যথা। জ্বর হয়ে যাবে।" সেই মতো একজন সাদা একটি কাপড় এনে দেন পাশ থেকে। অতীন ঘোষ, সুপ্তি পান্ডেও ছিলেন সেখানে। মমতা যখন সেই কাপড়টিতে মাথা ঢাকছেন, পাশ থেকে সাহায্য় করতে দেখা যায় অতীনকেও। সহজাত ভঙ্গিতেই সেই কাপড় মাথায় দিয়ে এগোন মমতা। (Suvendu Adhikari)
এর পর মঞ্চে ওঠার সময় হোঁচট খাওয়ার উপক্রম হয়। ঘোষণাকারী মমতাকে ছাতা দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু মমতা জানান, ছাতা নেবেন না তিনি। এর পর মমতা মাইক নিয়ে হাতে বলেন, "আসলে আমার টনসিল ফুলেছে। তাই আমি রিস্ক নিচ্ছি না। আগামী চার-পাঁচদিন করতে হবে।" সেখান থেকে বেরিয়ে এক এক করে বাকি পুজোগুলিও উদ্বোধন করতে যান মমতা। তিনি জানান, মহালয়ার পর থেকেই পুজোর উদ্বোধন করেন। আজ শুধু প্যান্ডেল উদ্বোধন করতে এসেছেন। কিন্তু হাতিবাগানের পুজোয় মাথায় কাপড় ঢাকা দেওয়া নিয়েই মমতাকে আক্রমণ করেন শুভেন্দু।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, "অত্যন্ত অন্যায়। একটু আগেই অতীন ঘোষের একটা পুজোয় গিয়েছেন। বিশেষ সম্প্রদায়কে বার্তা দিচ্ছেন হিজাব পরে। একটু পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করব। ভাল করে দেখবেন।" এর পর মমতাকে নকল করেও দেখান শুভেন্দু। একটি রুমাল মাথায় দিয়ে, কানের দুই পাশে গুঁজে দেন। বলেন, "হিজাবটা এভাবে নিয়েছিলেন, কানের পাশ দিয়ে ঢুকিয়ে। অতীন ঘোষ সাহায্য় করছিলেন। আমি দেখেছি। তিনি আজ পুজো উদ্বোধন করেছেন।"
শুভেন্দু আরও বলেন, "সরাসরি হিন্দু আস্থা, হিন্দু রীতি-নীতি, পরম্পরাতে আঘাত। আজ পিতৃপক্ষের শেষ দিন। হিন্দুরা যাঁদের পিতা-মাতাগত হয়েছেন, তাঁরা পিণ্ডদান করেন। কালাশৌচ থেকে মুক্তি পান তাঁরা। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে, আগামী কাল পুরো পরিকল্পিত ভাবে...হিন্দুরা যেহেতু বিভক্ত, সবাই যেহেতু ভোট দিতে যান না, ভোট দিতে গেলেও অনেকে অনেক ভাবে ভোট দেন, ভাগ করেন, একটা বিশেষ মেসেজ দিচ্ছেন ৩২-৩৩ শতাংশ ভোটারকে যে, আমি সম্পূর্ণ ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, আমি নাস্তিক, নাস্তিক নয়, আমি প্রো-মুসলিম লিগ। ভোটব্যাঙ্ককে একজোট করতে গিয়ে স্পষ্ট বার্তা।"
শরীর খারাপের কথা যে মমতা বলেন, তা কৌশল বলেও সায় দিতে শোনা যায় শুভেন্দুকে। বলেন, "বৃষ্টি পড়লে, তার জন্য ছাতা আছে। দেহরক্ষীকে দিয়ে না ধরালে, মাটির কাছাকাছি হলে, নিজে ধরতে পারতেন ছাতা।"
যদিও শুভেন্দুর দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় উদ্বোধন শুরু করেছেন শারদোৎসবের। বিরোধী দলনেতা কুৎসা করেছেন। যেমন বলেন। অবান্তর কথা। পরিষ্কার করে বলছি, বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা ভুল বলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মণ্ডপ এবং উৎসবের উদ্বোধন করছেন। পুজো উদ্বোধন করছেন না। চেষ্টা করেও কেউ পুজো উদ্বোধন করতে পারবে না। কারণ পুজোর উদ্বোধন হবে ষষ্ঠীতে, বোধনের মাধ্যমে। অর্থাৎ পুজো উদ্বোধন সম্ভব নয়। কেন এত আগে মণ্ডপ উদ্বোধন করছেন! কারণ তাঁর কাছে এত আমন্ত্রণ, ৩০০০-এর বেশি। কয়েকটিতে যাবেন, বাকি ভার্চুয়াল। অনেক আবার করতেও পারবেন না। তাই এর সঙ্গে শাস্ত্রের, হিন্দুধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁরা এসব বলছেন, তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন।"
এদিন পাঁজিও তুলে ধরেন কুণাল। জানান, একাধিক জায়গায় পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ পাঁজি বলছে, শুরু করা যায়। ১৬ দিন ধরে চলবে, দশমীতে শেষ হবে। পাঁজিতেই এই বিধান রয়েছে। তাই পাঁজি না জেনেই এসব বলা হচ্ছে বলে দাবি কুণালের। তিনি আরও বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু ধর্ম আমরা আপনাকে শিখিয়ে দেব। হিন্দু ধর্ম নিয়ে আপনারা ভোট মার্কেটিং করছেন, হিন্দু ধর্মের অপমান করছেন।"