কলকাতা: জাতীয় স্তরে বেঁধে বেঁধে থাকার সুর গলায়। অথচ রাজ্য রাজনীতিতে আদায়-কাঁচকলায়। তৃণমূল কংগ্রেসে (Congress)র এই সংঘাতে আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছেন বায়রন বিশ্বাস (Bayron Biswas)। কংগ্রেসের টিকিটে সাগরদিঘিতে জয়ী হওয়ার তিন মাসের মাথায় তৃণমূলে (TMC) যোগদান করেছেন তিনি। সেই নিয়ে কংগ্রেসের জেতীয় নেতৃত্বও তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Elections 2024) অবিজেপি জোটে (Opposition Alliance) কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সহাবস্থান নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। সেই আবহে মুখ খুললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জাতীয় এবং আঞ্চলিক অবস্থান আলাদা বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে বায়রন প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়া এবং সর্বোপরি জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটে ফাটল ধরা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। জবাবে মমতা বলেন, "জাতীয় স্তরে আমরা সকলে একসঙ্গে। রাজ্যস্তরের বিষয়টি বুঝতে হবে। এখানে প্রত্যেক দলের কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে।"
বায়রন তৃণমূলে যোগদান করার পর জোড়াফুল শিবিরকে একহাত নিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। গোয়া, মেঘালয় এবং ত্রিপুরাতেও তৃণমূল একই অবস্থা নিয়েছে। বিরোধীদের হাতশক্ত করার পরিবর্তে বিজেপি-র লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করেছে বলে ট্যুইটারে মন্তব্যকরেন জয়রাম। যদিও মমতার বক্তব্য, "আমরা গোয়া, মেঘালয়ে গিয়েছি। কিন্তু কংগ্রেস যখন রাজস্থান, গুজরাত, ছত্তীসগঢ়ে লড়েছে, আমরা যাইনি। বরং সমর্থন করেছি। তাই এ নিয়ে কিছু বলব না। যাঁর যা ইচ্ছে বলুন। সকলের বলার স্বাধীনতা রয়েছে। আপনারা জাতীয় দল, বিজেপি জাতীয় দল। চার-পাঁচ রাজ্যে না গেলে আমরা জাতীয় দল হব কী করে?"
একাধিক রাজ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে মমতার বক্তব্য, "ভোটে জেতা লক্ষ্য নয়, প্রাপ্ত ভোটের হারের জন্যই গিয়েছি। আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছে কমিশন। ২০২৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের মর্যাদা থাকার কথা ছিল। এটা ঠিক নয়। আমরা তো এটা চাইনি! তিন-চার জায়গায় একটু জায়গা চেয়েছিলাম। খালি ওরা থাকবে, আর কেউ নয়, এটা কী করে হয়! জয়রাম রমেশ এটা বলেছেন, ভাল করেছেন। যিনি সমালোচনা করবেন, তাঁকেই ধন্যবাদ জানাব।"
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে তৃতীয় বার বাংলায় ক্ষমতা দখলের পরই বিজেপি বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন মমতা। নিজে থেকেই দিল্লি ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। দফায় দফায় সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, শরদ পওয়ারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এমকে স্ট্যালিন, উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেন। কিন্তু সেই সময় কংগ্রেসের তরফে বিশেষ সাড়া মেলেনি বলে শোনা যায়। তাতে 'একলা চলো নীতি' ঘোষণা করেন মমতা। সম্প্রতি যদিও কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি বিরোধী জোটে থাকার পক্ষেই সায় দেন তিনি। শীঘ্রই বিহারের পটনায় সেই নিয়ে বৈঠকেও যাচ্ছেন। কিন্তু তার আগে বায়রনের তৃণমূলে যোগদান ঘিরে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে তৃণমূলের। সেই নিয়েই মুখ খুললেন মমতা।