আশাবুল হোসেন, বিজেন্দ্র সিংহ ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, দার্জিলিং: ইউক্রেনফেরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের (Ukraine Return Medical Students) ভবিষ্যৎ নিয়ে কেন্দ্র উদাসীন বলে এ বার অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর দাবি, ইউক্রেনফেরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের দায়িত্ব নিতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। একই অভিযোগ তৃণমূলের (TMC) রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের। পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করেছে বিজেপি (BJP)।


৪০০ বাঙালিকে নিখরচায় পড়াব, বললেন মমতা


পাহাড় সফর থেকেই এ দিন এমন অভিযোগ করেন মমতা। বলেন, “এত গুলো ডাক্তারি পড়ুয়া, তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে কেউ ভাবছেন না। প্রধানমন্ত্রী উদাসীন। ৪০০ বাঙালি পড়ুয়াকে আমরা নিখরচায় পড়াব। কিন্তু কেন্দ্র তা চাইছে না। ওদের সাহায্য করা উচিত।”


যদিও মমতার অভিযোগ উড়িয়ে দেন রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “কয়েক জন মুষ্টিমেয় ছাত্র ছাত্রীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। কোনও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এটাকে সমর্থন করবেন?”


যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাণে বেঁচে কোনওক্রমে দেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু তাঁদের কোর্সের ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন কার্যত রাজনৈতিক যুদ্ধ বেধেছে। মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে চলে আসা বাঙালি পড়ুয়ারা যাতে রাজ্যেই কোর্স শেষ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। কিন্তু তাঁর দাবি,  রাজ্য সরকার ইউক্রেনফেরত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে চাইলেও, উদাসীন মোদি সরকার। তাঁর কথায়, আমাদের তো অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু কেন্দ্র অনুমতি দিলে,  রাজ্য পুরোপুরি পড়ার খরচ বহন করতে প্রস্তুত। আমি ইতিমধ্যেই দাবি জানিয়েছি। চিঠি লিখেছি।”


আরও পড়ুন: Mamata On Rampurhat : 'রামপুরহাটকাণ্ড বিজেপির বড় ষড়যন্ত্র' , প্রশ্ন তুলে তোপ মমতার


মঙ্গলবার রাজ্যসভায় বিষয়টি তোলেন তৃণমূল সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেনও। সরকারের সামনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কতজন মেডিক্যাল পড়ুয়া ইউক্রেন থেকে ফিরে এসেছেন? দেশে মেডিক্যাল কোর্সে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কত আসন খালি? যাঁরা কোর্স শেষ না করেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কী ভাবছে?


এর জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পাওয়ার জানান, যাঁরা ইন্টার্নশিপ শেষ না করেই দেশে ফিরে এসেছেন, তাঁদের ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষায় পাশ করতেই হবে। বিদেশ থেকে মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়ে ফেরা ভারতীয় পড়ুয়াদের এখানে কাজ করতে হলে এই পরীক্ষায় পাশ করা বাধ্যতামূলক।


ইউক্রেনফেরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের নিয়ে রাজনৈতিক তরজা


শান্তনুর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, যারা বাইরে থেকে ইন্টার্ন করে এসেছে, অর্থাৎ কোর্স কমপ্লিট করেছে, তাদের দায়িত্ব নেবে, বাকি বিপুল পরিমাণ মেডিক্যাল স্টুডেন্টস যারা ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার পড়তে পড়তে চলে এসেছে, তাদের কোনও দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার নেবে না, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে।”


পাল্টা এই ইস্যুতেই তৃণমূল সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে  রাজ্য বিজেপি। শমীক বলেন, “কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব তৈরি করানোর জন্য এসব বলছেন। বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পড়ুযারা যাতে ফিরে যেতে পারে ব্যবস্থা করতে হবে। অসমে আন্দোলনের সময় প্রচুর পড়ুয়া এসেছিলেন বাংলায়। তখন জ্যোতি বসু চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখন ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের এখানে ভর্তি করানো যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী বিভ্রান্ত করছেন।”