কলকাতা: মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বিক্ষোভ চলছেই। সেই আবহেই ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা মমতার। মঙ্গলবার তিনি বললেন, "প্রকৃত ভাবে যে অধিকার দেওয়া যায়, যা আইনত স্বীকৃত, আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্য সরকার চলে রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো, নীতি অনুযায়ী। কেন্দ্রের পরিকাঠামো আলাদা। কেন্দ্রের রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক আছে। রাজ্যের নেই। রাজ্যের টাকা ছাপানোর ক্ষমতাও নেই। আগে অনেক কর সংগ্রহ করতে পারতাম। এখন একটাই কর, জিএসটি। সেটা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র। তা থেকে যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তা পাচ্ছি না আমরা। আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। একশো দিনের কাজে মাইনে পায়নি। ৭ হাজার কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। গ্রামীণ রাস্তা, আবাসন টাকা পাচ্ছে না। আমি যখন বিরোধী দলে ছিলাম, দেখেছি, শিক্ষকরা মাইনে পাচ্ছেন না ১ তারিখে। ১৫-১০ তারিখে মাইনে হয়। তিন-মাস ছ'মাসও টাকা পেতেন না। সরকারি কর্মচারিরা সময়ে পেনশনও পেতেন না। আজ গর্ব করে বলতে পারি, এত ধার করে রেখে যাওয়ার পরও ১ তারিখে মাইনে দিই, পেনশনও দিই। যে সরকার এত মানবিক, তা নিয়ে ভাববেন না।"
মমতা আরও বলেন, "রাজ্য সরকারের পে কমিশন, রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী চলে। ষষ্ঠ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী টাকা দিয়েছি আমরা। কিন্তু আপনারা যদি বলেন, রাজ্যের কাজ করবেন, আর কেন্দ্রের হারে ডিএ নেবেন, তা তো হয় না! কেন্দ্রের স্কুলের বেতন আলাদা, রাজ্যের আলাদা। দুই সরকারের পরিকাঠামো আলাদা। আমার ক্ষমতা থাকলে অবশ্যই ভালবেসে দিই। নিশ্চয়ই দিই। সিপিএম ৩৩ শতাংশ দিয়েছিল। আমরা ১০৬ শতাংশ দিয়েছি। ২০১৯-এ ষষ্ঠ কমিশনের সুপারিশের সবটাই দিয়েছি। একদিনে স্বাস্থ্যসাথী চলছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চলছে, বিনা পয়সায় স্কুল চলছে, ইউনিফর্ম দেওয়া হচ্ছে, পেনশনও চলছে, বিনামূল্যে রেশনও চলছে, আর কত করতে পারে একটা সরকার!"
মমতা আরও বলেন, "আমি তো বলছি, আমি যদি কোনও অন্য়ায় করি, আপনারা আমার গালে যদি দুটো চড় মারেন, আমি কিছু মনে করব না। তবে হ্যাঁ, যদি দেখি আমি দোষী। আমি জীবনে জেনেশুনে কারও অন্যায় করিনি। ক্ষমতায় আসার পর একজন সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি। তবে তোমরা কেন খাচ্ছো! দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কাড়বার ক্ষমতা আছে! সিপিএম-এর আমলে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা রায় দেখেছিলাম। চাকরি মামলা ছিল। বলেছিলেন, সংশোধন করে নাও যদি ভুল থাকে। চাকরি খাওয়ার কথা বলেননি। আর এখন রোজ কথায় কথায় ৩ হাজার, ৪ হাজার চাকরি বাদ। নিচুতলায় যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, সবাই আমার তৃণমূলের ক্যাডার নয়, সরকারের ক্যাডার নয়, নিচে বসে যদি কেউ অন্যায় করে, আমি ন্য়ায়ের পথে থাকব। ব্য়বস্থা নেব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এটা আমার চিরকালের স্বভাব। কালও দুই জন আত্মঘাতী হয়েছে। অন্য কেউ ভুল করে থাকলে, তার দায়িত্ব তারা নেবে কেন! আজ একটা ছেলেমেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। চাকরি করে বলে বাবা-মাকে দেখতে পারছে। হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে খাবে কী! ভাবছে, আমি থাকতে আমার ছেলেমেয়েরা পাবে কী? অন্য়ায় করলে কড়া পদক্ষেপ করুন। কোনও দয়া নেই তাদের জন্য। ছেলেমেয়েগুলি যেন এর শিকার না হন। আইন অনুযায়ী চাকরি ফিরিয়ে দিন। সুযোগ দেওয়া হোক আবার। হোক আলাদা ব্যবস্থা। সিদ্ধান্ত আপনারা নিন। দরকার হলে আবার পরীক্ষা নিন। কাল জলপাইগুড়িতে আত্মঘাতী হয়েছে একজন। কোন দলের সমর্থক জানি না, কিন্তু পরিবারটা কাঁদছে। মন কাঁদছে আমারও। কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না। এটা রাজনীতি নয়। দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই হয়েছে কিছু রাজনৈতিক লোক। কত মামলা পডে রয়েছে, রোজ জনস্বার্থ মামলা, রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত, জনস্বার্থ নয়। নিজের স্বার্থে কেউ কেউ এগুলো করছএ। সবাই নয়। আইনজীবীদের বলব ভেবে দেখবেন বিষয়টি। আমাকে আপনাদের পছন্দ না হতে পারে, আমার দলকে পছন্দ না হতে পারে, আমার সরকারকে না পছন্দ হতে পারে এত মানবিক কাজ করার পরও। যা ইচ্ছে দুবেলা গালি দিন। মারুন দরকার করে। আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু রাজ্যটাকে বদনাম করবেন না। ছাত্রযৌবনের খআওয়ার অধিকার কেড়ে নেবেন না দয়া করে। আমি মানবিক ভাবে সকলের পাশে ছিলাম,আছি, থাকব এমন মামলায়।"