কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডে গোড়া থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলছেন রাজনীতিকদের একাংশ। জুনিয়র ডাক্তাররা যখন নবান্নের নীচে অপেক্ষমান, সেই নিয়ে এবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, "মানুষের স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি, আমি পদ চাই না।" মমতা জানিয়েছেন, আন্দোলনে জন্ম তাঁর। তাই জুনিয়র ডাক্তার বা অন্যদের আন্দোলন তিনি আটকাবেন না। তিনি দানবিকতায় নয়, মানবিকতায় বিশ্বাসী। (Mamata Banerjee)


মমতা এদিন বলেন, "প্রথম দিন থেকেই চেষ্টা করছি আমরা। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে, আমাদের সরকারকে অসম্মান, অপমান করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসা, অপপ্রচার হয়েছে। মানুষ কলকাতায় এসেছিলেন আন্দোলনে, ওঁরা জানতেন না এর মধ্যে রং রয়েছে। আশাকরি মানুষ বুঝতে পারছেন, ওরা বিচার চায় না, ওরা চায় চেয়ার। আমি মানুষের স্বার্থে পদত্যাগ করতেও রাজি আছি। আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই না। আমি চাই, মানুষ বিচার পান, তিলোত্তমা বিচার পান, আর সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পান।"


বৃহস্পতিবার আবারও জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নে বৈঠকে আহ্বান জানানো হয়। ১৫ জনের সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও, ৩০ জন প্রতিনিধিকেই ঢুকতে রাজি হয় রাজ্য। বৈঠকের ভিডিও রিপোর্টিংয়ে রাজি হয় সরকার। কিন্তু লাইভ সম্প্রচারের দাবিতে অনড় ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাই ৫টায় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, হয়নি। (RG Kar Case)


প্রায় দু'ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর নবান্নের কনফারেন্স হল থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। প্রথমেই জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন মামলা নিয়ে বৈঠকের লাইভ সম্প্রচার করা যায় না। তাই ভিডিও রেকর্ডিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও জুনিয়র ডাক্তাররা রাজি হননি। এই বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমাও চান মমতা।


এদিন মমতা বলেন, "আমি কালও বসেছিলাম। এলেই চলে আসতাম। আমি ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার হিসেবে দেখি না এটাকে। বড়রা ছোটদের ভালবাসে। আমি জানি সিনিয়র ডাক্তার কষ্ট করে কাজ করছেন। তাঁদের অভিনন্দন রইল। বাংলরা মানুষের আবেগের কাছে বলব, আমি ক্ষমা চাইছি। আপনারাও আশায় ছিলেন আজ সমাধান হয়ে যাবে। আমি দুই ঘণ্টা বসে আছি, তিন দিন ধরে বসে আছি। যাঁদের বিরুদ্ধে ওরা অভিযোগ করছে, তাঁদের অনেকেই হয়ত একমাস আগে জয়েন করেছে। অনেককে বৈঠকেও রাখিনি। তার পরও বৈঠক ডেকে, আসবেন বলেও, নবান্নের গেট থেকে যাঁরা এলেন না, আমি ক্ষমা করে দিলাম। অনুরোধ করছি, কাজে যোগ দিন। আর্ত রোগীদের বাঁচান। আর কোনও মৃত্যু যেন না হয় বাংলায়।"


এর পরও যদি জুনিয়র ডাক্তাররা আলোচনায় বসতে চান, তিনি রাজি বলে জানান মমতা। তিনি জানান, সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা এখনও আসতে পারেন, কথা বলে সমালোচনা করতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কাজে না ফেরা নিয়েও ক্ষমা চান মমতা। দেশ-বিদেশ থেকে যাঁরা জুনিয়র চিকিৎসকদের সমর্থন জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছেও ক্ষমা চান মমতা। তিনি জানান, তাঁরাও সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য বিচার চাইছেন। তাই কাজে ফেরা উচিত জুনিয়র চিকিৎসকদের। শাসক হিসেবে কখনও কখনও সরকারকেও অনেক ধৈর্য ধরতে হয়, সহ্য করতে হয় বলে জানান মমতা। 


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: আগের বার লাইভ হয়েছিল, তখন মামলা CBI বা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ছিল না, নবান্ন থেকে জানালেন মমতা