মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: শহরের নতুন নোংরা বর্জ্য ফেলার ডাম্পিং স্টেশন কোথায় হবে? তা নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা পুরসভার (Municipality)।  শঙ্করপুর  থেকে পেয়ালা  এই সরকারি ডাম্পিং স্টেশন সরিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে এখন রুখে দাঁড়িয়েছে পেয়ালার মানুষ।ক্ষোভ বাড়ছে পুরসভার বিরুদ্ধে। সমালোচনা বিরোধী দলের, বিকল্প রাস্তা খোঁজা হচ্ছে আশ্বাস পুরসভার। 


পনেরো বছর ধরে দুর্গাপুরের শঙ্করপুরে চলছে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প। কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক সহায়তায় জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন শঙ্করপুরে এই প্রকল্প শুরু হয় তৎকালীন বাম সরকারের আমলে। শহর দুর্গাপুরের ৪৩ টি ওয়ার্ড থেকে দুর্গাপুর নগর নিগম যে নোংরা বর্জ্য সংগ্রহ করে সেই বর্জ্য গিয়ে ফেলা হল শঙ্করপুরের এই ডাম্পিং স্টেশনে। একটি বেসরকারি সংস্থা এই বজ্যগুলিকে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে এক করে রিসাইকেলিং করে অন্য কাজে ব্যবহার করত। 


এতে দূষণ যেমন কমতো ঠিক তেমনি দুর্গন্ধ তৈরি হত না। রিসাইকেলিং এর কাজে নিয়োজিত দুর্গাপুর নগর নিগম থেকে বরাত পাওয়া এই সংস্থা অজ্ঞাত কোনও এক কারণে হাত তুলে নেয় বলে অভিযোগ।এরপর শঙ্করপুর গ্রামে ঐ ডাম্পিং স্টেশনে আবর্জনার পাহাড় জমে আছে। এর দরুণ এলাকায় দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে শঙ্করপুর গ্রামে বহুতল নির্মাণ হয়েছে। তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফরেন্সিক ল্যাব, হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলে আর্থ সামাজিক অবস্থা বদলাতে শুরু করায় এবার দূষণের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে সাধারণ মানুষ। দাবি উঠেছে, অবিলম্বে এই ডাম্পিং স্টেশন দুর্গাপুর নগর নিগমকে সরাতেই হবে। 


স্থানীয়দের চাপে এবার দুর্গাপুর নগর নিগম ঠিক করে শঙ্করপুর গ্রাম থেকে সরকারি এই প্রকল্প সরিয়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ডিপিএল কারখানা সংলগ্ন পেয়ালা গ্রামের কাছে এই প্রকল্প নিয়ে আসা হবে। আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ২৫ বিঘে জমিও পায় দুর্গাপুর নগর নিগম। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে স্থানীয়দের প্রবল বাধার মুখে দুর্গাপুর নগর নিগম।


স্থানীয় পেয়ালা গ্রামের মানুষের অভিযোগ, একেই ডিপিএল কারখানার কালির জেরে তারা নাজেহাল, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ থেকে পেটের রোগ এমনকি চামড়ার রোগ শুরু হয়েছে। এবার আবার শহরের নোংরা আবর্জনার বর্জ্য ফেলার ডাম্পিং স্টেশন তৈরি হলে দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে দাঁড়াবে এলাকাবাসীর। পুজোর পর দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় সহ প্রশাসক মন্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে পেয়ালা গ্রামেই এক আলোচনায় বসে স্থানীয়রা। কিন্তু সেখানেও আপত্তি জানায় পেয়ালা গ্রামের মানুষ। যুক্তি তক্কে না গিয়ে শেষ পর্যন্ত মিটিং ছেড়ে প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপারসন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় চলে যান বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন। 


কিন্তু জোর করে পেয়ালা গ্রামে ডাম্পিং স্টেশন করার চেষ্টা হলে এর পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছে এলাকার মহিলারা।  প্রশাসক মন্ডলির সদস্য রাখি তেওয়ারি নগর নিগমের পাঁচটি বোরো এলাকায় ছোট ছোট করে ডাম্পিং স্টেশন করা যেতে বলে বিকল্প রাস্তার খোঁজ দিয়েছেন।তাহলে কি সরকারি এই প্রকল্প নিয়ে দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যেই বিভাজন শুরু হয়েছে? উত্তরে বিরোধীরা বলছে কোনও পরিকল্পনা নেই দুর্গাপুর নগর নিগমের, আর যার জন্য একটা সরকারি প্রকল্পকে নিয়ে ছেলেখেলা করছে। এখন শাখের করাতের মতো অবস্থা দুর্গাপুর নগর নিগমের, এগোলেও বিপদ পিছলে তো মহাবিপদ।


আরও পড়ুন, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এসে মমতাকে কী কমিটমেন্ট 'ভাইজানের' ?


এইদিকে সামনে ২০২৪ এর নির্বাচন রয়েছে, আছে দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন, এর আগে মানুষকে চটিয়ে দিয়ে এই কাজ করতে চাইছে না দলের একাংশ,এখন কোন পথে যায় পুরো বিষয়টি সেটাই দেখার। তবে পেয়ালা গ্রামের মানুশ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সর্বশক্তি দিয়ে এই কাজ তারা রুখবেন।