সুনীত হালদার, কলকাতা: মতুয়া-ঠাকুরবাড়িতে ভাইয়ে-ভাইয়ে দ্বন্দ্বের খবর। সেই আবহে কি মতুয়া-রাজনীতির সমীকরণ বদলাচ্ছে? বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রশ্নেই এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি। কারণ ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীর দ্বারস্থ হলেন মতুয়াদের একাংশ। ভোটার তালিকায় 'কারচুপি'র বিহারে এই মুহূর্তে 'ভোটার অধিকার যাত্রা' করছেন রাহুল। সরাসরি সেখানে গিয়ে রাহুলের সঙ্গে দেখা করলেন মতুয়া-প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে বেশ খানিক ক্ষণ বৈঠকও করেন রাহুল। পাশাপাশি, দিল্লিতেও আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছেন। (Rahul Gandhi)

রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবার মতুয়াদের ৩০ জন প্রতিনিধির একটি দল বিহার রওনা দেয়। বনগাঁ থেকে হাওড়া হয়ে পটনা রওনা দেন তাঁরা। শনিবার ছাপরায় 'ভোটার অধিকার যাত্রা' করছেন রাহুল। এদিন সেখানেই রাহুলের সঙ্গে দেখা হয় তাঁদের। যাত্রা শুরুর আগে সকাল ৯টা বেজে ১৫ মিনিট থেকে ৯.৩০টা পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল। কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৈঠকে মতুয়াদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি। সমস্যাগুলি জানতে চান। SIR চান না বলে মতুয়া প্রতিনিধিরা জানান রাহুলকে। পাশাপাশি, রাহুল যে জাতিগণনার দাবি করে আসছিলেন বরাবর, সে ব্যাপারে রাহুলকে সমর্থন জানান সকলে। (Matua Mahasangha)

মতুয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাহুলের এই সাক্ষাতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁরই উদ্যোগে রাহুলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ মেলে। বৈঠকে রাহুল সকলকে জানান, অধীরের মাধ্যমে সকলকে খবর পাঠাবেন তিনি। দিন ঠিক করে দিল্লিতে ডাকবেন সকলকে। সেখানে বিশদ আলোচনা হবে। রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুশি মতুয়া-প্রতিনিধিরাও। এমনকি একমা থেকে ছাপরা পর্যন্ত 'ভোটার অধিকার যাত্রা'য় যোগও দেন তাঁরা। মতুয়া প্রতিনিধিদের অভিযোগ, বিজেপি এবং তৃণমূল, দুই দলই তাঁদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করছে। ভোট এলেই কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে, হেনস্থা করা হচ্ছে। আতঙ্কিত রয়েছেন তাঁরা। এই সমস্যা খতিয়ে দেখা হবে বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন রাহুল।

এদিন রাহুলের সঙ্গে মতুয়া প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে একটি ব্যানার নজর কাড়ে সকলের।  ওই ব্যানারে রাহুলকে 'রাহুল দাদা' বলে উল্লেখ করা হয়। লেখা হয়, 'SIR-এ বিপদ, কংগ্রেসে নিরাপদ'। রাহুলকে পশ্চিমবঙ্গে স্বাগত জানানো হয়েছে মতুয়া মহাসঙ্ঘের ওই ব্যানারে। রাহুলের সঙ্গে মতুয়া প্রতিনিধিদের এই সাক্ষাৎ রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মতুয়া-ভোট নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে কম টানাপোড়েন দেখেননি রাজ্যবাসী। কিন্তু গত কয়েক বছরে মতুয়াদের পাশে বিজেপি-র 'ভোটব্যাঙ্ক' তকমাও সেঁটে যায়। বিজেপি-র ছোট-বড় নেতানেত্রী তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদেরও মতুয়াদের মনজয়ের চেষ্টা করতে দেখা যায়। এমনকি মতুয়াদের খুশি করতেই শান্তনু ঠাকুরকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী করা হয় বলে দাবি শোনা যায়। 

কিন্তু তার পরও মতুয়াদের অস্তিত্ব সঙ্কট কাটেনি বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। নির্বাচন এলে NRC, CAA-র দরুণ আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হতো এতদিন। বর্তমানে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে SIR. এমন পরিস্থিতিতে মতুয়া-ঠাকুরবাড়ি থেকেও তেমন আশ্বাস মিলছে না। বরং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু, তাঁর দাদা, বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে উত্তরাধিকারের প্রশ্নে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। মমতাবালা ঠাকুরও সেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। 'মতুয়াদের হিন্দু বানানোর চেষ্টা চলছে' বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই আবহে 'ভোট চুরি', 'ভোটার তালিকায় কারচুপি'র অভিযোগে সরব রাহুল ও কংগ্রেসের কাছেই মতুয়ারা নিরাপত্তা খুঁজছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।