সুনীত হালদার, হাওড়া: ঘরে সাত মাসের কন্যাসন্তান। তার টানেই বেঙ্গালুরু (Bengaluru) থেকে শ্যামপুরের (Howrah) বাড়িতে ফিরছিলেন শামীম বাদশা। কিন্তু আর আসা হল না। মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেলেন ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের ওই যাত্রী। এদিন দুপুরে ময়নাতদন্তের পর তাঁর পরিবারের হাতে শামীমের (Migrant Laborer) দেহ তুলে দেওয়া হয়। 


কী জানা গেল?
মৃতের বয়স ২৭ বছর। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক শামীম গত সাড়ে তিন মাস যাবৎ বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। মার্বেল কারিগর হিসেবে কাজ করতেন তিনি।  বাড়ি ফিরছিলেন ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে। কিন্তু মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা কাড়ল প্রাণ। প্রথমে গুরুতর জখম হয়ে সোরো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শামীম। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে যুবকের দেহ আসে উলুবেরিয়া মহকুমা হাসপাতালে। রবিবার দুপুরে সেখানে ময়নাতদন্তের পর শামীমের পরিবারের লোকজনদের হাতে শেখ শামীমের দেহ তুলে দেওয়া হয়। বাড়িতে প্রৌঢ় বাবা-মা ছাড়াও স্ত্রী রয়েছেন যুবকের। আর রয়েছে এক সাত মাসের শিশুকন্য়া যার সঙ্গে আর কখনও বাবার দেখা হবে না। এদিন দেহ হাতে পাওয়ার পর শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন শামীমের পরিজন। এলাকায় বিষাদের ছায়া। এবার কী করবে ওই পরিবার? কী করে চলবে তাদের? শিশুকন্যারই বা কী হবে?

কী ঘটেছিল?
এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার জেরে লাইনচ্যুত হয়ে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ৮টি কামরা। শালিমার থেকে চেন্নাইয়ের পথে যাচ্ছিল ট্রেনটি। বালেশ্বরের কাছে বাহানাগর স্টেশনে কার্যত ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে এগোনোর মাঝে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনার পর কার্যত দেশলাইয়ের খোলের মতো লাইনের পাশে উল্টে পড়ে ট্রেনের কামরাগুলি। দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর স্থানীয়রা প্রথমে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। যারপর বিভিন্ন কামরা থেকে শুরু হয় মরিয়া উদ্ধারকার্য। এদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলা থেকে এখনও পর্যন্ত ৬২ জন মারা গিয়েছেন। তার তালিকা হাতে পেয়েছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে আরও জানা যায়, এখনও ১৮২ জনকে শনাক্ত করা যায়নি। জেলায় জেলায় ছবি পাঠানো হয়েছে, শনাক্তকরণের জন্য। শনিবার নিজে বালেশ্বর পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তার পর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও যান। রবিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে বলেন, "লাগাতার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি আমরা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। প্রচুর মানুষের প্রাণ গিয়েছে। প্রিয়জনকে খুঁজে পাচ্ছে না অনেক পরিবার।" তবে এত তাড়াতাড়ি হতাহত নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলেও জানান মমতা। তাঁর যুক্তি, দু'টি ট্রেনে সংরক্ষিত আসনে প্রচুর যাত্রী তো ছিলেনই, অসংরক্ষিত কামরাতেও প্রচুর লোকজন ছিলেন। সকলের নামের তালিকা থাকে না রেলের কাছে। সেই তালিকা এখনও রাজ্য সরকারের হাতেও এসে পৌঁছয়নি। তাই হতাহত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সকলে।


আরও পড়ুন:এই ৫টি জিনিস স্বপ্নে দেখলেই বিপদ সংকেত! জীবনে আসতে পারে দুর্ভোগ