হিন্দোল দে, কলকাতা: ছেলেকে কীভাবে খুন করা হয়েছে, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে আদালতের বিচারকের সামনেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন কাঁকুড়গাছির (Kankurgachi) নিহত বিজেপি (BJP) কর্মী অভিজিৎ সরকারের মা। এনআরএস হাসপাতালে (NRS Hospital) ভর্তি করা হয় তাঁকে। মানসিক চাপ সহ্য় করতে পারছে না মা, দাবি নিহতের দাদা বিশ্বজিতের।
২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আজ সোমবার কাঠগড়ায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন নিহতের মা। চোখের সামনে ছেলেকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে! আদালত কক্ষে সেই ঘটনা বর্ণনা করতে করতেই জ্ঞান হারালেন মা। ২৮ শে ফেব্রুয়ারির পর, সোমবার। সাক্ষ্য়গ্রহণের সময় ফের অসুস্থ হয়ে পড়লেন, কাঁকুড়গাড়ির নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মা, মাধবী সরকার।
২০২১-এর ২ মে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিনই, মৃত্যু হয় কাঁকুরগাছির বাসিন্দা, বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য অভিজিৎ সরকারের। ঘটনার দিন, যখন বাড়িতে হামলা হয়, সেই মুহূর্তে ফেসবুক লাইভ করেছিলেন অভিজিৎ। পরিবারের অভিযোগ, শ্বাসরোধ করে, মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয় তাঁকে।
ঘটনার তদন্ত শুরু করে CBI। খুনের মামলায় সাক্ষ্য় দেওয়ার জন্য় সোমবার পুলিশি ঘেরাটোপে, শিয়ালদা আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় অভিজিতের মা-কে। এদিন বিচারক গোটা ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। অভিজিতের মা বলেন, ২রা মার্চ আমার ২ ছেলে অভিজিৎ ও বিশ্বজিৎ বাড়ির কাছেই বিজেপির পার্টি অফিসে বসে টিভি দেখছিল। আমি ঘরেই ছিলাম। আচমকা বোমার শব্দ হয়। বাইরে বেরিয়ে দেখি, তৃণমূলের ছেলেরা পতাকা নিয়ে দৌড়ে আসছে। এরপরই পার্টি অফিসে ভাঙচুর শুরু হয়। সিসিক্য়ামেরা ভেঙে দেয়। আমি ছেলেদের নিয়ে কোনওরকমে বাড়ি চলে আসি। এরপর তৃণমূলের ছেলেরা বাড়ির দিকে তেড়ে আসে। দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে যায়।
অভিজিতের মায়ের দাবি, তৃণমূলের ছেলেরা নিজেদের মধ্য়ে বলাবলি করছিল, 'দাদা বলেছে ওকে মেরে দে, তখন বিচারক প্রশ্ন করেন - দাদা কে? কার কথা বলা হচ্ছে? উত্তরে নিহত বিজেপি কর্মীর মা বলেন, পরেশ পাল।
তিনি আরও বলেন, ছোট ছেলে অভিজিতের পা ধরে টেনে নিয়ে বাইরে চলে যায় তৃণমূলের ছেলেরা। তিনি আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি। মাধবী সরকারের দাবি, এরপর লাঠি, বাটাম দিয়ে ছেলেকে মারতে শুরু করে। পুলিশের সামনেই চলে মারধর। তাঁর দাবি, এক মহিলা গলা টিপে ধরে। আরেকজন ইট দিয়ে মুখ থেঁতলে দেয়। এরপরই আদালত কক্ষে অজ্ঞান হয়ে যান অভিজিতের মা।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় NRS হাসপাতালে। এর আগে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, আদালতে সাক্ষ্য় দিতে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন মৃত বিজেপি কর্মীর মা। ভেস্তে যায় সাক্ষ্য়গ্রহণ পর্ব। এবার আদালত কক্ষেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন তিনি।
মৃত বিজেপি কর্মীর দাদা বিশ্বজিৎ সরকার বলছেন, আমার মা এতটাই মানসিক চাপে রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সরকারি হাসপাতালে ভরসা নেই। পরেশ পালের লোক মেরে দিতে পারে। অন্য়ত্র নিতে পারি।
এদিন অভিজিতের মাকে হাসপাতালে দেখতে যান বিজেপি নেতা তমোঘ্ন ঘোষ। খুনের পরেও পরিবারকে চাপ। তৃণমূলের ওপর আক্রমণ। রাজ্য়ে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে নেমে পরেশ পালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তারপরেও মামলা তুলতে চাপ দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এই অভিযোগ সামনে রেখে আদালতের দ্বারস্থ হয় মৃত বিজেপি কর্মীর পরিবার। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মৃত অভিজিৎ সরকারের পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়।