কলকাতা: কীভাবে দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছিলেন শান্তনু (Shantanu Banerjee)? কীভাবে নিয়োগের নামে তোলা টাকা পৌঁছে যেত প্রভাবশালীদের কাছে? এ নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করা হয়েছে ইডির চার্জশিটে। নিয়োগের কালো টাকা সাদা করার জন্য একাধিক কৌশল নিয়েছিলেন বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা।


কীভাবে দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছিলেন শান্তনু?


নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা পৌঁছে গিয়েছিল হুগলির বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্যায়ের কাছে। সেই কালো টাকা সাদা করার জন্য একাধিক কৌশল নিয়েছিলেন ধৃত হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। ED-র চার্জশিটে বলা হয়েছে, কুন্তল ঘোষ বয়ানে দাবি করেছেন,শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে তিনি, অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেবেন। সেই মতো প্রার্থী জোগাড় করতে বলেছিলেন শান্তনু। এরপর, তাপস মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।  তখন, মানিক ভট্টাচার্য ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগ রয়েছে এই কথা বলে শান্তনুর সঙ্গে তাপসের মণ্ডলের বৈঠক করান কুন্তল। রাজনৈতিক সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ১ কোটি টাকা শান্তনুকে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন কুন্তল।

কিন্তু কীভাবে দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছিলেন শান্তনু? ইডির দাবি, এক্ষেত্রে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার মুখে উঠে এসেছে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের নাম।  চার্জশিটে ইডির দাবি, শান্তনু জেরায় দাবি করেছেন, ২০১২ ও ১৪-র টেট চাকরিপ্রার্থীদের থেকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তুলতেন অয়ন শীল। সেই টাকা পৌঁছে দেওয়া হত হুগলির বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ ও বেহালার বাসিন্দা সন্তু গঙ্গোপাধ্য়ায়ের কাছে। এই কুন্তল ও সন্তু ২ জনেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের অত্য়ন্ত ঘনিষ্ঠ।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সম্প্রতি ইডির মুখোমুখি হন তৃণমূল পরিচালিত আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গুণধর খাঁড়া। ED-র চার্জশিটে দাবি, তৃণমূল নেতা দাবি করেছেন, তিনি চাকরিপ্রার্থীদের থেকে মোট ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলেন শান্তনুকে। প্রাইমারি ১৭ জন ও আপারপ্রাইমারির ৯ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি নেওয়া হয়েছিল ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। কেন্দ্রীয় এজেন্সি আগেই দাবি করেছিল, কালো টাকা সাদা করতে দিনমজুরের অ্য়াকাউন্টও ব্য়বহার করেছিলেন শান্তনু।


ইডির দাবি, এক ঠিকা কর্মী জানিয়েছেন, শান্তনু নতুন সিম কার্ড দিয়ে তাঁর নামে অ্য়াকাউন্ট তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই অ্য়াকাউন্টের নম্বর বা অ্য়াকাউন্টের লেনদেনের কোনও তথ্য়ই কোনওদিন জানতে পারেননি ওই ঠিকা কর্মী। তাঁদের ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্ট থেকে চেকবুক, শান্তনুই সব ব্য়বহার করতেন বলে চাঞ্চল্য়কর দাবি করেছেন এক শ্রমিক। রাকেশ মণ্ডল নামে শান্তনু ঘনিষ্ঠ এক ব্য়ক্তি দাবি করেছেন, তাঁকে ইভান কনট্রেডের যৌথ ডিরেক্টর করেন শান্তনু। বলাগড়ের তৎকালীন তৃণমূল নেতার এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন, যে যেখানে সই করতে বলা হত, সেখানে সই করতে তিনি বাধ্য় হতেন। এছাড়াও ইডির চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে বেশ কয়েকটি নাম। যাঁরা চাকরির জন্য় টাকা দিয়েছিলেন শান্তনুকে। যেমন, বলাগ়ড়েরই বাসিন্দা, নিলয় মালিক। শান্তনু ঘনিষ্ঠ এই ব্য়ক্তির দাবি, চাকরির বিনিময়ে তিনি ২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন।

ED-র চার্জশিটে দাবি, এই নিলয় মালিকের নামে মালিক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কোম্পানি খুলেছিলেন শান্তনু। বলাগড়ের শ্রীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারি টেন্ডারের ৭০ শতাংশ কাজ এই সংস্থাই পেত। নিলয় মালিকের নামে কোম্পানি হলেও, এর পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল শান্তনুর হাতেই। চার্জশিটে একটি চাঞ্চল্য়কর হোয়াটস্ অ্য়াপ চ্য়াট উল্লেখ করেছে ইডি। আননোন বলে সেভ করা সেই নম্বর থেকে শান্তনুর ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেখানে লেখা, আপার প্রাইমারি ও ২০১৪-র টেট চাকরিপ্রার্থীদের থেকে অগ্রিম ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা দেওয়া হল। এরা আমাদের আত্মীয়। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ ধার দেনা করে এই টাকা দিয়েছে। তুমি তাঁদের জন্য় চাকরি কিম্বা টাকা ফেরত, কোনওটারই ব্য়বস্থা করতে পারোনি। এনিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে আমার ঝগড়া হচ্ছে। আমার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। আমি তোমায় ফোন করলেও, তুমি ফোন ধরছো না। এটা ঠিক নয়। এই হোয়াটস্যাপ মেসেজ শান্তনুর বিরুদ্ধে বিরাট তথ্য প্রমাণ বলে মনে করছে ED।


আরও পড়ুন: Lifestyle: শুধু বাইরে নয়, ঘরেও দরকার সান স্ক্রিন, মানেন অনেকেই