উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, শিবাশিস মৌলিক ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা : এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের হদিশ পাওয়া। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চালাচ্ছিল ইডি। আর তা করতে গিয়েই গ্রেফতার করা হয়, সেই সময়ের তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলকে। অয়ন শীলের অফিস থেকে পাওয়া নথিতে পুরসভাতেও নিয়োগ দুর্নীতির ইঙ্গিত পান তদন্তকারীরা।
সিনেমার পর্দায় নকল সিবিআই-এর রেড ছিল ! আর বাস্তবে হানা দিল আসল সিবিআই। পুর 'দুর্নীতি'র তদন্তে সিবিআই-এর স্পেশাল হান্ড্রেড। সল্টলেক থেকে হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে নদিয়া। যেদিন থেকে ওভালে, ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্য়ে শুরু হল
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল, সেদিন বাংলাজুড়ে কার্যত T 20 খেলল CBI। কোথাও আলমারিতে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালানো হল, কোথাও, আবার পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বললেন গোয়েন্দারা।
যেমন, ছাই চাপা আগুনের মতো, স্কুলে নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে, অয়ন শীলের অফিস থেকে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করার পর, অয়ন শীলের অফিসকে ডেটা মাইন বা তথ্যের খনি বলেও উল্লেখ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিসে হানা দেওয়ার পরে, ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, বিভিন্ন পুরসভা থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল। পরবর্তীতে এই তদন্ত যত এগিয়েছে, তাতে চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য সামনে এসেছে!
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি, রীতিমতো ৪ থেকে ৭ লক্ষ টাকা রেটে বিভিন্ন পুরসভায় দেদার চাকরি বিক্রি হয়েছে ! ইডি সূত্রের দাবি করা হয়, পুরসভায় শ্রমিকের চাকরির দাম ন্যূনতম ৪ লক্ষ টাকা ! গাড়ির চালকের চাকরির দাম ন্যূনতম ৪ লক্ষ টাকা ! সাফাইকর্মীর চাকরির দাম ন্যূনতম ৪ লক্ষ টাকা ! পুরসভার গ্রুপ ডি-র চাকরির দাম ন্যূনতম ৪ লক্ষ টাকা ! পুরসভার গ্রুপ সি-র চাকরির দাম ন্যূনতম ৭ লক্ষ টাকা ! পুরসভার টাইপিস্টের চাকরির রেট শুরু ৭ লক্ষ টাকা থেকে !
সূত্রের দাবি, ইডির জেরায় অয়ন দাবি করেন, তিনি ২০ থেকে ২৫% কমিশন পেয়েছেন। বাকি ৭৫-৮০% টাকা চলে যেত নির্দিষ্ট পুরসভার প্রভাবশালীদের কাছে। কিন্তু, সেই প্রভাবশালীরা কারা ? এক্ষেত্রে ইডি আগেই দাবি করেছিল, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীলের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করতেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। পরে চার্জশিটেও সেই দাবির সপক্ষে একাধিক তথ্য প্রকাশ করে ইডি। একই সঙ্গে অয়নের সম্পত্তির খতিয়ান তুলে ধরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দাবি করে, অয়ন শীলের যে স্থাবর সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে - তার বাজার মূল্য ১০ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। গাড়ি রয়েছে ৬৪ লক্ষ টাকার। শেয়ার রয়েছে ২৩ লক্ষ টাকার। চার্জশিটে দাবি করা হয়, ABS টাওয়ার নামে বহুতলেই অয়নের ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশাপাশি অয়নের বিরুদ্ধে OMR শিট বিকৃত করার অভিযোগ তোলা হয় চার্জশিটে।