অনির্বাণ বাগচী, কান্দি: গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তা ভাঙাচোরা। এতটাই বেহাল যে গাড়ি ঢোকে না, অ্যাম্বুল্যান্সও (Ambulance) যায় না সেই রাস্তায়। ফলে হাসপাতালে যেতে ভরসা পড়শিদের কাঁধ। অন্য কোথাও না, বাংলাতেই দেখা মিলেছে এই ছবি। মুর্শিদাবাদের (Murhsidabad) কান্দির ছবি এটি। ভিডিও ভাইরাল হতেই সামনে এল এমন ঘটনার ছবি। 


কী দেখা গিয়েছে ভিডিওতে?
ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত বছর সত্তরের এক বৃদ্ধকে স্ট্রেচারে করে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক-দু পা নয়, এভাবেই রোগীকে নিয়ে যেতে হয়েছে ৩ কিলোমিটার রাস্তা। এমন ভিডিও ভাইরাল (Viral Video) হতেই শোরগোল পড়েছে জেলায়। রাস্তার এমন অবস্থা কেন হবে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।


বারবার এমন ঘটনা:
এর আগে নভেম্বরে মালদার (Malda) বামনগোলায় সামনে এসেছিল এমন রাস্তার ছবি। মালদা-নালাগোলা রাজ্য সড়ক থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের এই গ্রাম বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। বেহাল রাস্তার কারণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স আসেনি সেখানেও। খাটিয়া করা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায় তরুণী। তারপরে ২৫ নভেম্বর, বাঁকুড়ার জয়পুরেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। হাসপাতালের তোরণ তৈরি করার জন্য রাস্তা কাটা হয়েছিল। ঘুরপথে  হাসপাতালে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল বাঁকুড়ার জয়পুরে। এবার মুর্শিদাবাদের কান্দিতেও একই রকম ছবি।


এবার মুর্শিদাবাদ:
এক মাসেরও কম সময়ে, মালদা, বাঁকুড়ার (Bankura) পর এবার বেহাল রাস্তার ছবি দেখল মুর্শিদাবাদের কান্দি (Kandi)। গ্রামের রাস্তায় ঢুকতেই পারল না অ্যাম্বুল্যান্স। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত ৭০ বছরের বৃদ্ধকে স্ট্রেচারে করে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যেতে হল ৩ কিলোমিটার রাস্তা। এই ভিডিও ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে গেছে জেলায়। কান্দি ব্লকের হিজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানন্দপুর গ্রাম। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও, গ্রামে ঢোকার মূল রাস্তা এতটাই বেহাল যে অ্য়াম্বুল্য়ান্স বা গাড়ি, কিছুই ঢোকে না। ফলে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটেই যেতে হয় কান্দিতে। 


এলাকাবাসীর দাবি, বাধ্য় হয়েই সোমবার গ্রামের বাসিন্দা অসুস্থ মহম্মদ শেখকে স্ট্রেচারে করে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তাঁর ছেলে শের মহম্মদের অভিযোগ, 'কালকে ৪টের দিকে নিয়ে গেছিলাম। নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। এমন অবস্থা যে বাইকে বসে যেতেও পারছেন না। তাই কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের এভাবেই বরাবর চলতে হচ্ছে। আমাদের রোগী বাড়িতে পড়ে মরছে।'


চলাচলের অযোগ্য় গ্রামের রাস্তা। বর্ষাকালে আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে এই রাস্তা। পড়ুয়াদের হেঁটে গ্রামের বাইরে স্কুলে যেতে হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিধায়কের কাছে দরবার করেও লাভ হয়নি। ওই গ্রামের বাসিন্দা কেরামুদ্দিন শেখ বলেন, 'গাড়ি তো ঢুকতে পারে না। কোনও কিছু না। ঘাড়ে করে নিয়ে গেছি আমরা সব সময়। এভাবেই আমরা চলছি। আমরা ৩৫ জন ডেভিডকে গিয়ে বললাম। বলল চার চাকা নিয়ে গ্রামে ঢুকছি। ১০ বছর কেটে গেল। কিছু হল না।'


রাস্তা মেরামতি করার জন্য প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে। কান্দি মহকুমাশাসক উৎকর্ষ সিংহ বলেন, 'বিষয়টা জানতাম না। বিডিওর সঙ্গে কথা বলছি। একটা সমাধান বার করছি। যাতে রাস্তা ঠিক হয়ে যায়।'


আরও পড়ুন:  মহুয়ার পাশে দল, তাপসকে কেন দূরে ঠেলা হল, বিস্ফোরক প্রয়াত অভিনেতার পরিবার