সৌভিক মজুমদার, অনির্বাণ বাগচী ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: বুধবারও হচ্ছে না রানিনগরে (Raninagar) স্থায়ী সমিতির নির্বাচন। ফের একবার স্থগিতাদেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)।
সর্বভারতীয় স্তরে যখন কংগ্রেস ও তৃণমূল (TMC) এক মঞ্চে আসছে। তখন বাংলায় দুই দলের মধ্যে বারবার সংঘাতের ছবি সামনে আসছে। রানিনগরেই স্থায়ী সমিতির নির্বাচন ঘিরে তুমুল টানাপড়েন চলেছে এখানে। কংগ্রেসের মিছিল ও সভা ঘিরে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়েছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল শিবির। তার জেরে ৩৬ জন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস পরিচালিত রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুদ্দুস আলি। মঙ্গলবার লালবাগ উপ সংশোধনাগারে, কুদ্দুস আলির সঙ্গে দেখা করতে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ২০ দিনের মাথায় এদিন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্য়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে ফের সরব হয়েছেন কুদ্দুস। পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূলও।
কেন স্থগিতাদেশ?
কিছুতেই কাটছে না মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) রানিনগরে স্থায়ী সমিতি নির্বাচনের জট। এই নির্বাচনে ফের স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে বুধবারও হচ্ছে না স্থায়ী সমিতির নির্বাচন। মঙ্গলবার, আদালতে মামলাকারী প্রশ্ন তোলেন, ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর নব নির্বাচিত প্রধান এবং উপপ্রধানদের তিনদিনের প্রশিক্ষণ শিবির চলছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কীভাবে সম্ভব? এরপরই, রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
২৭ আসন বিশিষ্ট রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে, বাম-কংগ্রেস (Congress) জোট জিতেছিল ১৪টিতে। তৃণমূল জয়ী হয় ১৩টিতে। কংগ্রেস কর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে, ৮ সেপ্টেম্বর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মুর্শিদাবাদের রানিনগর। অশান্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগে কংগ্রেস ও বাম নেতা কর্মী-সহ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস পরিচালিত রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুদ্দুস আলি।
১১ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের ৩ জয়ী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকে ভাঙিয়ে নেয় তৃণমূল। এরপর স্থায়ী সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া সারা হলেও, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা। বিচারপতি নির্দেশ দেন, যদি ইতিমধ্যে সমিতি গঠন হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলেও ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করা যাবে না। আদালতের নির্দেশে ২৭ সেপ্টেম্বর রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করার কথা আদালতে জানায় সরকার। ১৯ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির জেলবন্দি সভাপতিকে জেল থেকে এনে ভোটে অংশগ্রহণ করানোর নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ২৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী জামিন পান কুদ্দুস। মঙ্গলবার, লালবাগ উপ সংশোধনাগারে, ধৃত কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুদ্দুসের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)। তাঁর ক্ষোভ, 'ছোট কারণেও হাইকোর্টে যেতে হচ্ছে। মিথ্যা মামলা।' ২০ দিনের মাথায় মঙ্গলবার জেল থেকে ছাড়া পান কংগ্রেস নেতা কুদ্দুস আলি। পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্য়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সরব হয়ে তিনি বলেন, 'মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়েছিল। অনেক মানুষকে ফাঁসিয়েছে মিথ্যা কেসে। পুলিশ নির্দোষ মানুষকে গ্রেফতার করেছে।'
রানিনগরের তৃণমূল বিধায়ক সৌমিক হোসেন বলেন, 'এদের যে অত্য়াচার। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উস্কানি দিয়ে এলাকায় ঝামেলা করছেন। সেই কারণেই ওদের মেম্বাররা আমাদের সঙ্গে এসেছে।'
ইতিমধ্যে রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির ৪ জন সদস্য-সহ মোট ৬ জনের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেওয়ায়, আদালতে ফের নতুন তারিখ জানাতে হবে রাজ্য সরকারকে। ২৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি।
আরও পড়ুন: তালাবন্দি করে বিক্ষোভের ঘটনায় দলের নেতাকেই নিশানা বিজেপি সাংসদের