রাজীব চৌধুরী, বড়ঞা (মুর্শিদাবাদ) : মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল (Conflict within TMC)। বড়ঞায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির ডাকা বিজয়া সম্মিলনী থেকে বিধায়ক, ব্লক তৃণমূল সভাপতি ও যুব সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিল দলেরই একাংশ। তাঁদের নিশানায় ছিলেন, বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা, ব্লক তৃণমূল সভাপতি রবিন ঘোষ ও ব্লক যুব সভাপতি সামশের জামান। 


অস্বস্তিতে তৃণমূল শিবির-


বৃহস্পতিবার এই বিজয়া সম্মিলনীতে দেখা যায়, প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোলাম মুর্শেদ ওরফে জর্জ, প্রাক্তন ব্লক যুব সভাপতি মাহে আলমকে। সভায় ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান , সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদেরও দেখা যায়। এই সভা থেকেই দলের ব্লক সভাপতি ও বিধায়কের বিরুদ্ধে সুর চড়ান প্রাক্তন ব্লক ও যুব তৃণমূল সভাপতি। গোটা ঘটনায় তীব্র অস্বস্তিতে তৃণমূল শিবির। বড়ঞায় কি তৃণমূলের বিভাজন আসন্ন ? যে প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।


গত বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ জেলায় অভূতপূর্ব ফল করেছিল তৃণমূল। ২২টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয়লাভ করে তারা। কিন্তু, গত কয়েক মাসে ব্লক সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে যেভাবে নওদা, বেলডাঙা, বড়ঞা, ভরতপুর, রানিনগর, জলঙ্গি-সহ বিভিন্ন জায়গায় দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে, তাতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়ছে শাসক শিবিরের।


ঘরের ঝগড়া আগেই রাস্তায় নেমে এসেছিল। সম্প্রতি তা আরও বড় আকার নেয়। দলেরই ব্লক সভাপতির বিরোধিতায় প্রকাশ্যে তৃণমূলের কোন্দল ! ধুন্ধুমার বাধে নওদার আমতলায় তৃণমূলের পার্টি অফিসের সামনে ! পার্টি অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাঙেন তৃণমূল কর্মীরা। জ্বলে আগুন। এভাবেই চলে ব্লক তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিক্ষোভ !


এর আগে ব্লক সভাপতি নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল নওদার রাজনীতি। এবার বিরোধের সূত্রপাত হয় অঞ্চল সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।


মাসখানেক আগেই, নওদার ব্লক তৃণমূল সভাপতি করা হয় শেখ সফিউজ্জামানকে। যিনি সম্পর্কে মুর্শিদাবাদের সাংসদ ও জেলা সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু তাহের খানের ভাগ্নে। শুরু থেকেই সফিউজ্জামানকে ব্লক সভাপতি পদে বসানোর বিরোধিতা করেছেন নওদার তৃণমূল বিধায়ক শাহিনা মমতাজ। এই ইস্যুতে দু’পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিলই। বিরোধ-বিক্ষোভ আগেও হয়েছে। এই আবহেই মঙ্গলবার বহরমপুরে জেলা তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতে নওদার তৃণমূল বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতি, দু’জনেই উপস্থিত হন। সেখানে কোনও সমস্যা না হলেও বিধায়কের অনুগামীরা, ব্লক সভাপতি শেখ সফিউজ্জামানের বিরোধিতায় ভাঙচুর চালান নিজেদেরই পার্টি অফিসের সামনে।


এপ্রসঙ্গে নওদার তৃণমূল বিধায়ক শাহিনা মমতাজ বলেছিলেন, এমনিতে পাবলিক সফিউজ্জামানকে মেনে নিতে চায় না। দ্বিতীয় কথা, অঞ্চল সভাপতি করেছে না জানিয়ে, তাতেই ক্ষোভ সবার। আমি জানি না। জেলা সভাপতি জানেন না। কেউই জানেন না। এরা তো আপনারই অনুগামী না ? আমি সবাইকে বারণ করেছিলাম যে করতে হবে না। পাবলিক যদি খেপে যায়, তাহলে খুব মুশকিল না!


যদিও নওদার ব্লক তৃণমূল সভাপতি শেখ সফিউজ্জামান বলেন, এটা দলের বিরোধিতা নয়। বিরোধীদের বিরোধিতা। যারা কংগ্রেস করেছে, সেই সমস্ত কংগ্রেসিদের বিরোধিতা। দল থেকে বিতাড়িতদের বিরোধিতা। দলের বিরোধিতা করে সেদিন সাসপেন্ড হল, আবার তারা অঞ্চল সভাপতি হবে? আবার তারা প্রধান, উপপ্রধান হবে? তাদেরকে আমাদের স্বাগত জানাতে হবে? এটা অন্ততপক্ষে দলের অভিভাবক হিসেবে আমি করতে পারব না।


আরও পড়ুন ; তৃণমূলের কোন্দলে রণক্ষেত্র মুর্শিদাবাদ, পার্টি অফিসের সামনে ভাঙচুর, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ