রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ : শীত আসার আগে ফের মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সামশেরগঞ্জে শুরু হয়েছে গঙ্গা ভাঙন (Ganga Erosion)। পাশাপাশি দুটি গ্রামে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি। আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। কোন পথে ভাঙন-সমস্যার সমাধান? তা নিয়ে অব্যাহত রাজনীতি।


সর্বগ্রাসী ভাঙন


নদী গিলে খাচ্ছে গাছপালা। ক্রমশ ঘুচে যাচ্ছে জল আর জনপদের ব্যবধান। ভাঙনের গ্রাসে কৃষিজমি। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে (Samsergung) পুজোর আগে থেকেই শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে গঙ্গা। মঙ্গলবার থেকে ধানঘরা ও শিবপুর গ্রামে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এবার কি মাথার ওপর ছাদটুকুও হারাতে হবে? আতঙ্কের প্রহর গুনছেন গ্রামবাসীরা। আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের অভিযোগ, আমাদের কথা কেউ ভাবছে না। কতদিন ধরে ভাঙন চলছে।


ভাঙনেও রাজনীতি !


ভাঙন-বিপর্যয় নিয়েও ‘আমরা-ওরা’র রাজনীতি। সামশেরগঞ্জের তৃণমূল ব্লক সভাপতি সহিদুল ইসলাম বলেছেন, 'আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না'। বিজেপির মুর্শিদাবাদ উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ পাল্টা দুষেছেন রাজ্য সরকারকে।


এর আগে সামশেরগঞ্জে গঙ্গা-ভাঙন পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন সেচ প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রীকে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন সিপিএম নেতা। সামশেরগঞ্জের সিপিএম নেতা মহম্মদ আজাদ বলেছেন, 'কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সরকারই ভাঙন-কবলিত মানুষদের জন্য কিছু করেনি'।


রাজনীতি তার মতো চলবে। কিন্তু এভাবে পাড় ভাঙতে থাকলে, তাঁদের কী হবে? তা ভেবেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে সামশেরগঞ্জের বাসিন্দাদের। প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ আগেই সামসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জে গঙ্গায় তলিয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী কালী মন্দির । ভয়াবহ গঙ্গার ভাঙনের কবলে তলিয়ে যায় মুর্শিদাবাদের (Murshidabad ) সামসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জ-মহেশটোলা এলাকার একমাত্র উপাসনালয় ঐতিহ্যবাহী কালী মন্দির। যার কিছুদিন পরে সামসেরগঞ্জের মহেশটোলা গ্রামের একটি দোতলা বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গা গর্ভে।


পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবেন কী করবেন? কুল কিনারা না পেয়ে গ্রাম ছাড়ছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে সামসেরগঞ্জে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবিতে বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দিয়েছে কংগ্রেস। একই দাবিতে জঙ্গিপুরের সেচ দফতরের অফিসের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিএম। ফারাক্কা ব্যারাজের জিএমের অফিসের সামনে অবস্থানে বসে তৃণমূলও। জিএমকে লিখিতভাবে দেওয়া হয় ডেপুটেশন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসে CISF-এর জওয়ানরা। সামসেরগঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেছেন, 'ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে অনিয়ন্ত্রিত জল ছাড়ার জন্য এই পরিস্থিতি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ফারাক্কা ব্যারেজের অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করতে দিতে হবে।' প্রতিবছর গঙ্গা ভাঙন সামশেরগঞ্জের বাসিন্দাদের জীবনে নিয়ে আসে দুর্দশা। আদৌ কি কোনওদিন স্থায়ী প্রতিকার হবে ?


আরও পড়ুন- শুধু বোমা নয়, মজুত ছিল প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্রও, নরেন্দ্রপুরের বোমাবাজির তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য