অনির্বাণ বিশ্বাস, অনির্বাণ বাগচী ও পূর্ণেন্দু সিংহ, বড়ঞা: পুকুর থেকে বিধায়কের মোবাইল ফোন উদ্ধারের চেষ্টা শুরু হয়েছিল শুক্রবার রাতে। শনিবার সন্ধের পরও বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার মোবাইল ফোনের হদিশ পেল না সিবিআই। প্রশ্ন উঠছে, বিধায়কের মোবাইল ফোনের মধ্যেই কি লুকিয়ে রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির কোনও বিস্ফোরক তথ্য? মিলবে কি প্রভাবশালীদের নাম? আপাতত ফোনের খোঁজে রয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। 


এ যেন মুর্শিদাবাদের Mobile Mystery! নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারি, টাকার পাহাড় উদ্ধার, গয়নার ভাণ্ডারের খোঁজ, বিপুল সম্পত্তির হদিশ, সবই দেখেছে রাজ্য়বাসী। কিন্তু, শুক্রবার বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি ঘিরে যে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হল, তা কার্যত বেনজির! 


কখনও নিজের মোবাইল ফোন ছুড়ে পুকুরে ফেললেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা! কখনও আবার তাঁর বাড়ি লাগোয়া জঙ্গল থেকে উদ্ধার হল নথি ভর্তি ৫টি ব্যাগ! নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে, শুক্রবার বেলা ১২টার পর থেকেই বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঘটে যায় নাটকীয় ঘটনা! সিবিআই সূত্রে দাবি আচমকাই গোয়েন্দাদের থেকে নিজের দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে সেগুলি লাগোয়া পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তৃণমূল বিধায়ক!


স্বাভাবিকভাবেই এতে গোয়েন্দাদের মনে সন্দেহ জোরাল হয়, কী এমন রয়েছে ওই মোবাইল ফোনে? কী লুকোতে চাইছেন তৃণমূল বিধায়ক? বিকেল ৫টার পর থেকে মোবাইলের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই!যা রাতেও চলে। শনিবার সকাল ৭ থেকে পুকুর থেকে বিধায়কের মোবাইল ফোন দুটি উদ্ধারের জন্য আরও ২টি পাম্প বসানো হয়। ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পরে মোবাইল ফোনের অবস্থান জানতে আনা হয় কমপ্যাক্ট স্ক্যান ডিভাইস। কিন্তু তাতেও বিধায়কের মোবাইল ফোনদুটির হদিশ না মেলায়, সকাল ৯.১৫ নাগাদ পুকুরে নেমে শুরু হয় তল্লাশি।


নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এর আগে বহিষকৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ এবং বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করেছিলেন গোয়েন্দারা। শান্তনুর ফোনকে তো সোনার খনি বলে দাবি করেছিল ইডি!তাহলে কি তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার মোবাইল ফোনেও সেরকম কোনও তথ্য় রয়েছে?


মোবাইল ফোনে কি লুকিয়ে রয়েছে কোনও প্রভাবশালীর নাম? তা গোপন করতেই কি ফোন দুটি পুকুরে ফেলেন তৃণমূল বিধায়ক? এসব প্রশ্ন ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা। মার্চ মাসে একটি ফেসবুক পোস্টে দুর্নীতি ইস্য়ুতে সিপিএমকে খোঁচা দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।


এখন তাঁর বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি, মোবাইল ফোন পুকুরে ছুড়ে ফেলা নিয়ে, কটাক্ষ করেছে সিপিএম-ও। তৃণমূল অবশ্য় দলের বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখছে।


শুক্রবার সূর্যাস্তের আগে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই! একদিন পেরিয়েও চলল সেই ম্যারাথন অভিযান! CBI সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বিভিন্ন জনের মুখে উঠে এসেছে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের নাম। অভিযোগ, তিনিও টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশ করার অভিযোগও রয়েছে।