কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, আশাবুল হোসেন ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : '১৫-ই অগাস্ট পর্যন্ত দেখব।' তৃণমূলের দিকে আলাদা দল তৈরির হুঁশিয়ারি ছুড়ে দিলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। পাল্টা জয়প্রকাশ মজুমদার বলছেন, 'আগে পদত্যাগ করুন। দল এইসব ডেডলাইনের পরোয়া করে না।' এনিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি।
কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি, নির্দলের পর, এবার কি নিজের দল ? ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে একেবারে অন্য় রঙে দেখা যাবে তাঁকে ? বিধানসভা ভোটের কয়েকমাস আগে দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি শোনা গেল ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের গলায়। তাহলে কি বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলে ভাঙন ধরবে ? দল ছাড়বেন মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের অন্য়তম হেভিওয়েট সংখ্য়ালঘু মুখ ? হুমায়ুন কবীর বলছেন, "১৫ অগাস্ট অবধি দেখব, যে, এই জেলার নেতাদের কোনও সংশোধন বা পরিবর্তন কিছু হচ্ছে কি না। তারপরে একটাই অপশন আছে, মুর্শিদাবাদের সংখ্য়াগরিষ্ঠ যাঁরা মুসলিম জনতা, এমনকী কিছু হিন্দু ব্য়ক্তিও রয়েছেন, যাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাঁরা বলছেন যে, তাঁরা প্রস্তাব আকারে দিচ্ছেন বারবার। আপনি নিজে একটা কোনও রাস্তা বের করুন। শুধু হুমায়ুন কবীর কেন ? অনেক হুমায়ুন কবীর থাকবে।"
হুমায়ুন কবীরকে পাল্টা চ্য়ালেঞ্জ করছে তৃণমূল। উল্টোদিকে হুমায়ুনে সুরও কড়া । তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "যদি নতুন পার্টি তৈরি করেন, কেউ তো আটকাতে যাবে না । তার অধিকার আছে। তার আগে তো পদত্যাগ করুন। দল এইসব ডেডলাইনের পরোয়া করে না। উনি কালকে যেতে পারেন। ডেডলাইন দিয়ে লাভ নেই। দল কয়েকবার সতর্ক করেছে। দলের মধ্যে থাকতে গেলে অনুশাসন মেনে থাকতে হবে। তারপর ওঁর বিষয়।"
ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক বলছেন, "আমি যদি এটা করতে বাধ্য় হই, তারপর যতগুলো সিটে লড়াই করে, আমি তো জিতে আসবই। আমার সহকর্মী ক'জন জিতে আসবেন, তাঁরা কেউ অন্য় কিছু চিন্তাভাবনা করব না। আমরা তখন দর কষাকষির রাজনীতিটা মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে করব।"
হুমায়ুন কবীর সাম্প্রতিককালে বারবার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। দল তাঁকে দু'বার শোকজ করলেও তাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি তাঁকে। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "হুমায়ুন কবীরের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা বা স্থিরতা নেই। এই হুমায়ুন কবীর এর আগে অনেক কথা বলেছেন। কিছুই করে দেখাতে পারেননি। নিজের কেন্দ্র ভরতপুর সেখানে ওঁর কুশপুত্তলিকা পোড়াচ্ছে, আর জুতোর বাড়ি মারছেন তৃণমূলের লোকেরা। আমি পরিষ্কার মনে করি, বড় বড় হুঙ্কার না দিয়ে আগে করুক, তারপরে দেখা যাবে।"
আক্রমণ শানান সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, "উনি ছিলেন কংগ্রেস, হলেন তৃণমূল। আসলেন কংগ্রেসে, গেলেন বিজেপিতে, এখন আবার তৃণমূল। এটা কোনও রাজনীতি নাকি ? এটা দর কষাকষির লড়াই। কেননা, উনি পিসির পাশেও আছেন, উনি ভাইপোর পাশেও আছেন। তাহলে উনি তৃণমূলের পাশে নেই মানেটা কী ?"
বিধানসভা ভোটে কি মুর্শিদাবাদে নতুন ভোট-সমীকরণ দেখা যাবে ?