কলকাতা: নবান্ন অভিযান ঘিরে সকাল থেকে ধুন্ধুমার কাণ্ড। ব্যারিকেড, গার্ডরেল ভাঙা থেকে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট-পাথর বৃষ্টি চলল আন্দোলনকারীদের। পাল্টা জলকামান দেগে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে এবং লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি ঠেকায় পুলিশ। দিনভর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির নেপথ্যে আসলে একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন ছিল বলে দাবি করল তারা। (Nabanna Abhijan)
মঙ্গলবার দিনভর অশান্তির পর সন্ধেয় সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। সেখানে তিনি জানান, আজ কলকাতা-সহ সর্বত্র পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। ব্যারিকেড করা ছিল জায়গায় জায়গায়। সংরক্ষিত জায়গায় জমায়েত বেআইনি। তাও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করার প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু আন্দোলন কতটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তা সকলে দেখেছেন। (RG Kar Nabanna Abhijan)
পুলিশ আধিকারিক জানান, গতকাল সাংবাদিক বৈঠক করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ 'ছাত্র সমাজে'র তরফে। কিন্তু আজ প্ল্যাকার্ড হাতে এসে ব্যারিকেড ঝাঁকানো, গার্ডরেল উল্টে দেওয়া শুরু হয়। বার বার মাইকে ঘোষণা হয় পুলিশের তরফে। সকলকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে বলা হয়, কিন্তু পুলিশকে লক্ষ্য করেই লাঠি, ইঁট-পাথর, বোতলবৃষ্টি হয়। সরকারি সম্পত্তি, সাধারণ মানুষের সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। রক্ত ঝরেছে পুলিশের। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের গাড়ি।
এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) এদিন বলেন, "বাংলার ছাত্রসমাজের আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা, তাণ্ডব দেখলাম আমরা। সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় অশান্তি চলল পূর্ণ কর্মদিবস ছিল আজ। মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু পদক্ষেপ করতেই হতো। কারণ প্রচুর মানুষ কাজে বেরিয়েছিলেন, আজ কর্মব্যস্ত দিন ছিল। কিন্তু চেষ্টা হচ্ছিল, পুলিশকে প্ররোচিত করার, যাতে পুলিশ এমন কিছু করে ফেলে, তাতে সুবিধা হয় আন্দোলনকারীদের। পুলিশ সেই ফাঁদে পা দেয়নি। শান্তি এবং নিরাপত্তার খাতিরে যতটুকু প্রয়োজন পড়েছে, ততটুকু করেছে। পুলিশ রক্তাক্ত হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে। তার পরও ধৈর্য ও সংযম দেখিয়েছে।"
ছাত্র সমাজের নামে আন্দোলন হলেও, আজ নবান্ন অভিযানের নেপথ্যে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ নিহিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) । তাঁর কথায়, "ছাত্র সমাজের নামে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের যা চেহারা দেখলাম, তাতে আমার মনে হয় না, পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃত ছাত্ররা এই গুন্ডামি, অসভ্যতা এবং বিশৃঙ্খলা করতে পারে বলে। আমরা জানি, বাংলার ছাত্রছাত্রীরা এমন অসভ্যতা করবেন না। ছাত্র সমাজের নামে নিহিত স্বার্থ চরিতার্থ করতে, নেপথ্য কোনও শক্তির ইন্ধনে আজ এই অশান্ত হল। আগের দিন থেকে চক্রান্ত ছিল, আমরা তা প্রতিহত করতে পেরেছি।"
পুলিশ জানিয়েছে, নবান্ন অভিযানে অশান্তির ঘটনায় ১৫ জন অফিসার আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ১২৬ জনকে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আরও বেশ কিছু তাণ্ডবকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।