পার্থপ্রতিম ঘোষ, সৌমিত্র রায় ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা: প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন । তারপর মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয় জলে । নদিয়ার তেহট্টে বালক খুনের ঘটনায় ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এমনই তথ্য় উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর । কিন্তু প্রশ্ন হল, কী কারণে খুন? মাত্র ৮ বছরের বালকের ওপর কার এত রোষ? 

বয়স মাত্র ৮...জীবন যখন শুরু হওয়ার কথা... তখনই সব শেষ... নদিয়ার তেহট্টের বাসিন্দা, ৮ বছরের ছোট্ট স্বর্ণাভকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে । পরিবারের দাবি, শুক্রবার দুপুরে খেলতে বেরিয়েছিল সে । তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই । নিহত বালকের বাবা বলছেন, 'আমি বাড়ি ছিলাম না । ওর মা ছিল । বেশি সময় বাড়ির বাইরেই থাকে, যেদিন স্কুল থাকে না । দুপুরের সময় ঘুমায় ।'

তেহট্ট থানায় অপহরণের অভিযোগ জানায় স্বর্ণাভর পরিবার । এরই মধ্য়ে শনিবার ভোরবেলা, বাড়ির পাশের ডোবা থেকে উদ্ধার হয় বালকের ত্রিপল জড়ানো দেহ...পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, খুন করা হয়েছে ছোট্ট স্বর্ণাভকে । গলায় কিছু পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে । খুনের পর ডোবায় ফেলে দেওয়া হয় মৃতদেহ । প্রশ্ন হচ্ছে, কী কারণে এমন নৃশংসভাবে খুন? এইটুকু বালকের ওপর এত আক্রোশ কেন? কে বা কারা এমন মারাত্মকভাবে খুন করল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রকে? 

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতকুমার ভট্টাচার্য বলেন, 'এটাকে বলা হয় Mob Psychology। একজনের কথা অনুরণিত হয়ে ধীরে ধীরে তা বহুজনের মনে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলছে এমন ঘটনা ঘটছে। এই বিষয়টি এখনই সামাল দিতে না পারলে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। একটা সময় হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।'  

এদিকে এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রতিবেশি দম্পতিকে পিটিয়ে খুন করেছে গ্রামবাসীরা । ঘটনাস্থলে এখনও পড়ে রয়েছে বাঁশ, লাঠির টুকরো... উৎপল মণ্ডল নামে ওই ব্য়ক্তির বিরুদ্ধে আগেও শিশু চুরির অভিযোগ রয়েছে । বালকের হত্য়াকারী সন্দেহে শুধু যে দম্পতিকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে, তা-ই নয়... মারধরে গুরুতর অসুস্থ তাঁদের এক আত্মীয়ও । সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি । তাঁদের সার-পাটের গুদামেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়... খুনের পর যে ডোবায় বালকের মৃতদেহ ফেলা হয় এবং যেখানে খুনি সন্দেহে দম্পতিকে পিটিয়ে মারা হয়, দুই জায়গাই সিসিটিভিতে মুড়ে দিয়েছে পুলিশ । ঘটনাস্থলে বসানো হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প ।