কল্যাণী : আরজি কর-কাণ্ড ঘিরে তোলপাড়ের মধ্যেই অপসারিত কল্যাণী কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড জেএনএম হাসপাতালের অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। নতুন অধ্যক্ষ হলেন হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মণিদীপ পাল।


প্রাক্তন অধ্যক্ষের দাবি, মেডিক্যাল শিক্ষা-চিকিৎসার নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের যোগ্যতামান না  থাকায় তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জেনারেল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে ২০২৩-এর ৩০ জানুয়ারি, কল্যাণী কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড জেএনএম হাসপাতালের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৩১ মে, তাঁকে অধ্যক্ষ পদে অযোগ্য বলে সুপারিশ করে মেডিক্যাল শিক্ষা-চিকিৎসার নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন। তার ভিত্তিতেই এই অপসারণ। কিন্তু NMC-র নির্দেশ মানতে ৩ মাসেরও বেশি সময় লাগল কেন ? প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসক মহলে।


অপসারিত অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখার্জি বলেন, 'অর্ডার দিয়েছে। আমি চার্জ হ্যান্ডওভার দিয়ে দিয়েছি। নতুন প্রিন্সিপ্যাল অধ্যাপক মণিদীপ পাল। '


আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ আন্দোলনে উত্তাল গোটা রাজ্য। নানা মেডিক্যাল কলেজে আন্দোলনে নেমেছেন ডাক্তাররা। যার মর্মান্তিক পরিণতির কারণে এমন হচ্ছে, সেই তিনি ছোট থেকেই ছিলেন অত্য়ন্ত মেধাবী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৯০ শতাংশ। আর ছিল প্রবল আত্মবিশ্বাস। তাতে ভর করেই জয়েন্টে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উত্তীর্ণ। হাতের সামনে ছিল ২টো রাস্তা। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। তাই বেছে নিয়েছিলেন MBBS-এর পথ। 


স্বপ্ন সফল করার জন্য ছুটছিলেন। সেই ছোটার জন্য়ই কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ থেকে MBBS পাশ করার পরে চিকিৎসা করতে এবং আরও উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছিলেন আরজি করে। মেধাবী, শান্ত আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেই মেয়েটি আর নেই। এপ্রসঙ্গে ঘটনার পরপরই কল্যাণী কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড জেএনএম হসপিটালের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'ও এমবিবিএস এখান থেকেই পাশ করে। পাশ করার পরে আমার ইউনিটেই ছিল। আমার কাছে শব্দ নেই বলার। মেয়েটি এত ভাল, কাজের দিক থেকে হোক, ব্য়বহারের দিক থেকে হোক। সবদিকে খেয়াল রেখে কাজ করত।' 


সালটা ছিল ২০১১। কল্যাণী কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড জেএনএম (Kalyani JNM Hospital) হাসপাতালে ভর্তি হন ছাত্রীটি। এখানেই এমবিবিএস। এখানেই ইন্টার্নশিপ। তারপর কিছুদিনের জন্য ডেমোস্ট্রেটর। এই কলেজ, এই ক্যাম্পাস জানে তাঁর প্রথম সব কিছু। বাকিটা জানে আরজি কর। সাধারণ এক পরিবার থেকে উত্তরণ। সেখান থেকেই পাড়ি দিয়েছিলেন অনেকটা পথ। বাকি ছিল সামান্য কিছুটা। কিন্তু একটা রাত, অন্ধকার করে দিয়েছে তাঁর জীবন। থমকে গেছে সব স্বপ্ন, সব ভাবনার ভবিষ্যৎ।