সুজিত মণ্ডল, নদিয়া : সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আজকাল আমরা প্রায় সকলেই 'ক্রাউড ফান্ডিং'- এই শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত। রানাঘাটের এক দম্পতিও এবার এই ক্রাউড ফাইন্ডিংয়েরই আবেদন জানিয়েছেন। নিজের শিশুকন্যার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে। ফুটফুটে অস্মিকা দাস। বয়স এক বছর পূর্ণ হয়নি এখনও। কিন্তু এর মধ্যেই এই ছোট্ট মেয়ের শরীরে বাসা বেঁধেছে এক জটিল রোগ। চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া। অস্মিকার সুস্থতার জন্য প্রয়োজন একটি মাত্র ইনজেকশন যার দাম ১৬ কোটি টাকা। এই ইনজেকশন আসবে সুদূর আমেরিকা থেকে। মধ্যবিত্ত দম্পতির একার পক্ষে ১৬ কোটি টাকা জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাই ক্রাউন্ড ফান্ডিংয়ের রাস্তা বেছে নিয়েছেন রানাঘাটের দাস দম্পতি।
জন্মের পর থেকে ঠিকই ছিল অস্মিকা। কিন্তু বয়স যখন চারমাস, সমস্যা দেখা দেয় তখন থেকেই। আর পাঁচটা বাচ্চার মতো হাত-পা নাড়াতে পারছিল না অস্মিকা। বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছিল বেশ কিছু সমস্যা। সঙ্গে সঙ্গেই শিশুকন্যাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে যান অস্মিকা বাবা-মা। আর তারপরই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায়, অস্মিকা আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম জটিল রোগ স্পাইনাল ম্যাসকিউলার অ্যাট্রফি- তে। এই বিশেষ রোগের 'টাইপ ওয়ান' স্টেজে আক্রান্ত হয়েছে শিশুটি। মারণ রোগ নয়। কিন্তু এই জটিল রোগের চিকিৎসার খরচ কল্পনার অতীত। আর তা জোগাড় করার জন্য হাতে রয়েছে মাত্র ৫ মাস।
নদিয়ার রানাঘাট স্টেশনের কাছে স্বামী বিবেকানন্দ সরণি-র দাসপাড়ার বাসিন্দা এই দাস পরিবার। ২০২২ সালে শুভঙ্কর দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় লক্ষ্মী সরকারের। 'লাভ ম্যারেজ'- এর পর ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি ঘর আলো করে আসে ছোট্ট অস্মিকা। শিশুকন্যার জন্মের পর চারমাস আনন্দেই কাটছিল। বাদ সাধল এই জটিল রোগ। স্থানীয় ডাক্তার, কলকাতার পর ভেলোরে গিয়েও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন শুভঙ্কর এবং লক্ষ্মী।
চিকিৎসকরা জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত অস্মিকা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তার নাম স্পাইনাল ম্যাসকিউলার অ্যাট্রফি। বিশেষ এই রোগের 'টাইপ ওয়ান' রয়েছে তার। এই রোগ হলে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশের বৃদ্ধি থমকে যায়। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সমাধানও রয়েছে এই রোগের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জোলজেন্সমা নামের একটি বিশেষ ইনজেকশন দিয়ে রোগের উপশম সম্ভব। ইনজেকশনটি ভারতে নয়, সুদূর আমেরিকায থেকে আনতে হবে। তার দাম ১৬ কোটি টাকা। স্বভাবতই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে স্থানীয় এক দোকানের সাধারণ কর্মচারী শুভঙ্কর এবং তার পরিবারের মাথায়। এমনিতেও মেয়ের চিকিৎসার জন্য এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে কাজ খুইয়েছেন শুভঙ্কর। তাই ভরসা এখন জনগণের দরবার। সরকার-প্রশাসন, ব্যক্তিগত সাহায্যে, সর্বত্রই টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন শুভঙ্কর এবং লক্ষ্মী।
ইতিমধ্যেই কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবস্থা হাত বাড়িয়েছে সাহায্যের। কিন্তু টাকা জমা হয়েছে মাত্র ২ লক্ষ ৭৫ হাজার। এখনও বিপুল পরিমাণ টাকা জোগাড় করা বাকি। এদিকে সময় কমছে ঝড়ের গতিতে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্মিকার বয়স দেড় বছর হওয়ার মধ্যেই এই ইনজেকশন দিতে হবে। মেয়ের কি তাহলে চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে না? অস্মিকা কি তাহলে সুস্থ জীবন পাবে না? এই চিন্তায় ঘুম উড়েছে ছোট্ট শিশুকন্যার পরিবারের। আর কোনও উপায় না পেয়েই তাই সমাজের সকলের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন শুভঙ্কর এবং লক্ষ্মী। তাঁদের একটাই আবেদন, যে যেভাবে যতটুকু পারেন, আর্থিক সাহায্য যেন করেন। তাহলেই অস্মিকার ভবিষ্যৎ সোনালি দিন দেখবে।