সুজিত মণ্ডল, নদিয়া: মানুষের সেবায় ব্রতী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার জন্য মাস তিনেক আগেই রওনা দেন বিদেশ। কিন্তু গোলা-বারুদের ধোঁয়া, গন্ধ থেকে নিজেকেই প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসতে হলে বাড়িতে। ইউক্রেনে (Russia Ukraine War) ডাক্তারি পড়তে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হল বাংলার ছেলে অর্ক সমাদ্দারের।


নদিয়ার (Nadia News) শান্তিপুরের শ্যামবাজারের বাসিন্দা অর্ক। ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন চিকিৎসক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই ২০২১-এর ৮ ডিসেম্বর ইউক্রেন যাত্রা অর্কর। জাফরজিয়া স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের পড়ুয়া তিনি।


কিন্তু কলেজে ভর্তির তিন মাস কাটার আগেই যে ইউক্রেনে যুদ্ধের দামামা বেজে যাবে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি অর্ক। তাই লাগাতার বাড়ির সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন। বাড়ির লোকজনও টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসেছিলেন সারা ক্ষণ। যত দেখেছেন, ততই আঁতকে উঠেছেন। ছেলের মুখে বর্ণনা শুনে কোও ঝুঁকিই নেননি। সত্বর বাড়ি ফিরে আসার নির্দেশ দেন।


আরও পড়ুন: Madhyamik Exam 2022 : মাস্ক পরেই দিতে হবে মাধ্যমিক, স্পর্শকাতর এলাকায় পরীক্ষা শুরুর আগে বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট


সেই মতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, শনিবার রাতে বাড়ি ফিরছেন অর্ক। ইউক্রেনের পরিস্থিতি বর্ণনা করেত গিয়ে এখনও আঁতকে উঠছেন অর্ক। তিনি বলেন, “২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পড়ি আমরা। ট্রেন ধরে একের একের পর এক জায়গা পেরিয়ে হাঙ্গেরি পৌঁছই। তার পর বুদাপেস্ট। সেখান থেকে দিল্লি হয়ে দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছই। প্রশাসনের তৎপরতায় রাতে বাড়িতে পারি।”


অর্ক জানিয়েছেন, প্রথমে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা, সেখান থেকে অনতিদূরেই বোমা পড়ে। পানীয় জল, খাবার কিছুই পাননি। প্রথমে ভয়ে সেঁধিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। তার পর সাহস করে বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। শেষমেশ বাড়ি ফিরে স্বস্তি পেয়েছেন।


অর্কর বাবা কমল সমাদ্দার ডাক বিভাগের কর্মী। চেলেকে চিকিৎসক করে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর। তাই রানাঘাট কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পরই বিদেশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই ফিরে আসতে হল ছেলেকে। তবে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে, এই ভেবেই স্বস্তি পাচ্ছেন অর্কর পরিবারের লোকজন। সব ছেলেরাই যেন মায়ের কোলে ফিরে আসে, প্রার্থনা অর্কর মায়ের।