সুজিত মণ্ডল, নদিয়া: খেলতে খেলতে পরিবেশ বাঁচানোর লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে সৈন্য স্কুল পড়ুয়ারা। পরিবেশ বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ নিল নদিয়ার রানাঘাটের একটি স্কুল। পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে গুলতি, আর গুলির জায়গায় এসেছে Seedball- আর পড়ুয়ারা গুলতি ছুড়ে আশপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে গাছের বীজ।


নদিয়ার রানাঘাটের রামনগর এলাকায় মিলনবাগান শিক্ষা নিকেতন। এই স্কুলের শিক্ষকরাই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন। স্কুলের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে সিড ব্যাঙ্ক (Seed Bank)বা বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র। জেলায় (seed bank in Nadia) প্রথমবার এই স্কুলই নিয়েছে এমন অভিনব উদ্যোগ। সিড ব্য়াঙ্ক তৈরি করেই থেমে থাকেননি তাঁরা। গুলতি খেলার মধ্য দিয়ে সিড বল প্রকৃতির কোলে ছড়িয়ে দিচ্ছে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। 


স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র পর্ষদের তরফে সপ্তাহখানেক আগে মিলন বাগান শিক্ষা নিকেতনকে সিড বল তৈরি করার কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলা হয়। মূলত এঁটেল মাটি, গোবর সার ও ছাই মিশিয়ে প্রথমে তৈরি করা হচ্ছে মাটির একটি মন্ড। এরপর সেই মন্ডের ভেতরে তেঁতুল, জাম, লিচুর বীজ ভরে সেটিকে সিড বলের রূপ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই স্কুলের প্রায় ৫০০ জন ছাত্রছাত্রী মিলে ২ হাজারের উপর সিড বল তৈরি করে ফেলেছে। স্কুলেই সেগুলো সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিড বলগুলোকে পরিবেশে ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুলতি। সোমবার সকালে স্কুলের পেছনের অংশে সিড বল হাতে জড়ো হয় পড়ুয়ারা। সঙ্গে ছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এরপর পড়ুয়ারা একে একে গুলতি দিয়ে সেই বল ছুঁড়ে দেয় পুকুরের চারপাশে কিংবা খোলা মাটিতে। কিছুদিনের মধ্যেই বীজ ভর্তি সেই মন্ড মাটিতে মিশলে সেখান থেকে জন্ম নেবে নতুন গাছ। স্কুলের তরফে পরিবেশ বাঁচানো ও বৃক্ষরোপনের এই নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষা মহল।


স্কুলের শিক্ষকদের কথায়, সিড বল কী ভাবে তৈরি করতে হবে, তা আগেই ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে শিখিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। বাড়িতে বসে পড়ুয়ারাই নিজেদের মতো করে তৈরি করেছে সেই সিড বলগুলো। মূলত দেশি প্রজাতির বৃক্ষ জাতীয় গাছের বীজ দিয়েই তৈরি করা হয়েছে সিড বল।


স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয়কৃষ্ণ চাকী বলেন, 'সারা বছরই আমরা বৃক্ষরোপণ (Tree Plantation) কর্মসূচি নিই। কিন্তু ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া গুলতি খেলার মধ্য দিয়ে যখন আজকের প্রজন্মের পড়ুয়ারা সিড বল ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে, তাতে ওরা নতুন উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছে। ভবিষ্যতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন পুরসভাগুলির সঙ্গে যৌথভাবে এভাবে সিড বল ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে, তারই চেষ্টা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।