কলকাতা: কেন্দ্রে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় বসার পরই রাজ্যগুলিকে করবাবদ অতিরিক্ত কিস্তির টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিল NDA সরকার। পশ্চিমবঙ্গকে ১০ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা দেওয়ায় অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশকে। তারা ২৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা পাচ্ছে। এর পর তালিকায় রয়েছে বিহার। তারা পাচ্ছে ১৪ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ১০ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা পেতে চলেছে। (Tax Devolution to States)
করবাবদ যে কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা ঘরে তোলে, তা থেকে ৪১ শতাংশ প্রতি অর্থবর্ষে ১৪টি কিস্তিতে রাজ্যগুলিকে ভাগ করে দেওয়াই নিয়ম। এবার রাজ্যগুলিকে যে পরিমাণ টাকার অনুমোদন দিল কেন্দ্র, তাতে ১০ জুন পর্যন্ত মোট ২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত করবাবদ আয় থেকে রাজ্যগুলিকে কিস্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি কিস্তির টাকাও দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে চলতি মাসে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭৫০ টাকা রাজ্যগুলির হাতে তুলে দিতে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের দাবি, এতে রাজ্যের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির কাজও দ্রুত গতিতে এগোবে, পাশাপাশি কেন্দ্রও খরচের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে সক্ষম হবে। (Tax Devolution to West Bengal)
প্রাপ্ত টাকার অঙ্কের নিরিখে চতুর্থ স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সবমিলিয়ে রাজ্যগুলিকে করের বকেয়া বাবদ ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭৫০ টাকা দেওয়ায় অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতেই এই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, করবাবদ যে টাকা রাজ্য থেকে তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র, তাতে রাজ্যেরও প্রাপ্য রয়েছে। রাজ্যের প্রাপ্য টাকা রাজ্যকে দিয়ে সেই নিয়ে এত প্রচারের ঢক্কানিনাদ কেন, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: Sheikh Shahjahan: শাহজাহানকে কালো টাকা সাদা করতে সাহায্য় করেছিলেন এই ৫ জন, ED-র তদন্তে উঠে এল নাম..
এবিপি আনন্দে এ নিয়ে মুখ খোলেন তৃণমূলের শান্তনু সেন। তাঁর কথায়, "প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করবাবদ বাংলা থেকে ৪ লক্ষ ৭ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছে কেন্দ্র। অথচ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে। ৫৯ লক্ষ মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা হয়েছিল। সমস্ত বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষের আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছিল ওরা। বাংলা বিরোধীদের এর যোগ্য জবাব দিয়েছেন বাংলার মানুষ। তাই হয়ত বিলম্বিত বোধোদয় হয়েছে। কিন্তু বাংলার যে পরিমাণ টাকা পাওয়ান, সেই তুলনায় যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা আসরে কিচ্ছু নয়।"
রাজ্যগুলিকে তাদের প্রাপ্য টাকা দেওয়া নিয়ে এত প্রচার কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশও। তাঁর কথায়, 'কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক রাজ্যগুলিকে করের কিস্তির টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এক তৃতীয়াংশ প্রধামন্ত্রীর নির্দেশেই যে এটা হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু করের টাকার ভাগ দেওয়ার মধ্য়ে পরমাত্মার সন্তানের দয়া বা দাক্ষিণ্য লুকিয়ে নেই। সাংবিধানিক ভাবেই এই টাকা প্রাপ্য রাজ্যগুলির, যাতে অর্থ কমিশনেরও ভূমিকা রয়েছে। রাজ্যগুলিকে তাদেরই প্রাপ্য টাকা দিয়ে নিম্নমানের প্রচার চলছে'।
প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। বিশেষ করে যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি ক্ষমতায় নেই বা নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি, সেই সব রাজ্যের টাকা ইচ্ছাকৃত ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। টাকা আটকে রাখা নিয়ে সরগরম হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিও। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনামূলক আচরণ নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। নির্বাচনী প্রচারেও জায়গা করে নিয়েছিল সেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ। নির্বাচন মিটতে সেই টাকারই কিছুটা মিলল।