সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন নেতাজি। কিন্তু স্বাধীনতা প্রাপ্তির এত বছর পরে এই দেশ কী পেল? সাধারণ মানুষের প্রাপ্তি কী? কলকাতায় নেতাজির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সেই প্রশ্ন তুললেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে চেলামেশ্বর।


লোকসভা, বিধানসভা, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা - গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, ৫ বছর অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উন্নয়নের লক্ষ্যে নাগরিকরা ভোটদানের মাধ্যমে বেছে নেন তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে। কিন্তু, বর্তমান সময়ের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নীতি আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে দলবদল কার্যত রুটিনে পরিণত হয়েছে। 


এটাই কি গণতন্ত্রের আসল অর্থ? এর জন্যই কি বীর বিপ্লবীরা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন দেশের জন্য? কলকাতায় নেতাজির জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুললেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে চেলামেশ্বর। তিনি বলেন, "ব্রিটিশ শাসন শেষ হলেও, সমস্যা এখনও একইরকম আছে। সময়ে সময়ে ভোট হয়, এই  গণতন্ত্রটুকুই অবশিষ্ট আছে। কিন্তু সেই ভোট কেমন করে হয়? অর্থবলের সাহায্যে। কেমন করে জন প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন, সেটা আমরা সবাই জানি। সাদা মানুষদের হাত থেকে দেশের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ শুধু তা নয়। স্বাধীনতার অর্থ, যাতে সাধারণ মানুষ সম্মানের সঙ্গে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারেন।" 


আরও পড়ুন, একসময় শ্যামবাজারের এই ব্যাঙ্কেই কাজ করতেন রাজ্যপাল! সেই অফিসেই ফিরলেন সি ভি আনন্দ বোস


স্বাধীনোত্তর ভারতে রাজনৈতিক পরিসরে ধর্ম বা উগ্র আঞ্চলিক আবেগের মতো বিষয়গুলিকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন দলের বিরুদ্ধে। ধর্মীয় বিভেদের রাজনীতির টানাপোড়েনে ব্যতিব্যস্ত সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, বিচারব্যবস্থার ওপরেও সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে। সেইসমস্ত বিষয়গুলিতেও আলোকপাত করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে চেলামেশ্বর।


বিচারপতির কথায়, "স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে স্বপ্ন নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, সেই স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে? আমার মনে হয়, স্বাধীনতার এই ৭০ বছরে, আমাদের সমাজ আরও বেশি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা জাত-ধর্ম-আঞ্চলিকতা নিয়ে লড়াই করি। এক দেশের কথা বলা হয়। কিন্তু আমাদের নেতারা নদীর জল, রাজ্যের সীমানা - এই সব নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। একটু পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই কিন্তু এগুলো মেটানো যায়।" 


নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সর্বভারতীয় জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এদিন ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে চেলামেশ্বর।