কলকাতা: আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীকে তাঁর জন্মদিনে সমগ্র দেশজুড়ে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। ট্যুইট করে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু একজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নায়ক। বাংলা থেকে নেতাজীর উত্থান ভারতীয় ইতিহাসে অতুলনীয়। তিনি দেশপ্রেম, সাহসিকতা, নেতৃত্ব, ঐক্য ও সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক। নেতাজি সমস্ত প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রোটোকল অনুসরণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর জন্মদিনটিকে দেশনায়ক দিবস হিসেবে পালন করছে। নেতাজির স্মরণে কিছু দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগের মধ্যে, রাজ্যের টাকায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় জয় হিন্দ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন সংক্রান্ত নেতাজির চিন্তাধারা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে, পরিকল্পনা উদ্যোগে রাজ্যকে সহযোগিতার জন্য বেঙ্গল প্ল্যানিং কমিশন গঠন করা হবে।


মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্যাবলোতে নেতাজি ছাড়াও আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৭৫ তম বার্ষিকী স্মরণে বাংলার অন্যান্য বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভূমিকা তুলে ধরা হবে। 


এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী নেতাজীর জন্মদিবসে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করতে ফের কেন্দ্র সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমগ্র দেশ যাতে এই জাতীয় নায়ককে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে এবং যথোচিত মর্যাদায় দেশনায়ক দিবস পালন করতে পারে, সেজন্য কেন্দ্রের কাছে নেতাজীর জন্মদিন দিবসে ছুটি ঘোষণা করতে ফের অনুরোধ জানাচ্ছি। 


এদিকে, শনিবার নেতাজিকে নিয়ে একটি ট্রামের উদ্বোধন করল ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন। এই ট্রামে, রয়েছে নেতাজির কিছু বিরল ছবি...এবং বই। প্রথমে শ্যামবাজার ও পরে ধর্মতলা ডিপোতে এই ট্রামটি রাখা থাকবে।


উল্লেখ্য, ট্যাবলো নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্র ও রাজ্যের সংঘাত দেখা গিয়েছে। নেতাজি সংক্রান্ত রাজ্যের ট্যাবলো বাতিল ইস্যুতে তরজা চলছে। তার মধ্যেই, এবার রাজ্যে নেতাজির মূর্তি বসানো নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করল বিজেপি। পাল্টা, জবাব দিয়েছে তৃণমূল।


দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলার প্রস্তাবিত নেতাজি ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা আইএনএ বিষয়ক ট্যাবলো বাদ যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যাবলো বেছে নেওয়ার পদ্ধতির কথা জানিয়ে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। আর এই টানাপোড়েনের মধ্যে শুক্রবার দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর তারপরই এ রাজ্যে নেতাজির মূর্তি বসানো নিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটল বিজেপি।  দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন,  গত বছর বলেছিলেন, নিউটাউনে নেতাজির মূর্তি বসাবেন। এখনও হয়নি। হয়তো ভোটের কারণে এ’কথা বলেছিলেন। 


পাল্টা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, উনি হয়তো জানেন না, আমরা তখন ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা নিজেরা তদারকি করেছিলাম। এখনও যে অবস্থায় আছে তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের কারণেই


২০১৩ সালে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। বাড়ির ভিতরের অংশের সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ হলেও, বাইরের অংশের কাজ বাকি রয়েছে।


এই চাপানউতোরের মধ্যে ২৩ জানুয়ারি, ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। কিন্তু যতদিন না পর্যন্ত নেতাজির গ্র্যানাইটের মূর্তি তৈরি না হচ্ছে, সেই জায়গায় থাকবে হলোগ্রামের একটি স্ট্যাচু। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।