কলকাতা : ইডির পর এবার ভোটের মুখে আক্রান্ত এনআইএ ( NIA )। কোর্টের নির্দেশে ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডের ( Bhupatinagar Blast ) তদন্তে গিয়ে হামলার শিকার হলেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা । মাথা ফাটল আধিকারিকের। স্থানীয়দের ছোড়া পাথরে ভাঙল এনআইএ-র গাড়ির কাচ। এ যেন সন্দেশখালির ( Sandeshkhali ) পুনরাবৃত্তি ! কোনওক্রমে ফাটা মাথা, ভাঙা গাড়ি নিয়ে কলকাতায় ফিরলেন এনআইএ আধিকারিকরা। এদিন, ভূপতিনগর বিস্ফোরণ-মামলার তদন্তে গিয়ে তৃণমূল নেতা বলাইচরণ মাইতি এবং মনোব্রত জানাকে গ্রেফতার করে এনআইএ। তখনই গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হন তাঁরা। আর এই ঘটনায় এনআইএ-র বিরুদ্ধেই ফের আঙুল তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ( Mamata Banerjee ) । 


এনআইএ-র ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন,  'মধ্যরাতে কেন অভিযান? পুলিশকে জানিয়ে এসেছে? মধ্যরাতে গ্রামের মানুষ অচেনা কাউকে দেখলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। নির্বাচনের সময় কেন গ্রেফতার করে?' ভূপতিনগরে হামলার ঘটনায় এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেন এনআই। দেশজুড়ে আন্দোলন করার হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল নেত্রী। শুধু তাই নয় , দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে নির্বাচনী প্রচারের সভা করার সময় তৃণমূ্ল নেত্রী একই সুরে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ' মধ্যরাতে কেন অভিযান? পুলিশকে জানিয়ে এসেছে? মধ্যরাতে গ্রামের মানুষ অচেনা কাউকে দেখলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। গ্রামের মহিলারা প্রতিবাদ করবেই। ভোটে বিজেপির হয়ে কাজ করে বিএসএফ। আমরা কিন্তু জানতে পারব কোথায় কী হচ্ছে।এনআইএ আর সিবিআই, বিজেপির ভাই-ভাই। ইডি আর আইটি বিজেপির ফান্ডিং বক্স। ক্ষমতা থাকলে ভোটে জিতে দেখাও, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করবে না। মোদির গ্যারান্টি হল সেন্ট্রাল এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের গ্রেফতার করা' 


 অন্যদিকে ভূপতিনগরে এনআইএ-র উপর হামলা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার উস্কানির জেরেই তৃণমূল নেতারা এনআইএ-র উপর হামলার সাহস পেয়েছে।  সম্প্রতি মাথাভাঙার রাজনৈতিক সভায় এনআইএ-র বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকলেও রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। ওসি, এসডিপিও, এসপি ও ডিজিপি-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপের এটিই সঠিক সময়।' নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। 


২০২২-এর ২ ডিসেম্বর, কাঁথিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগের রাতে, ভূপতিনগরে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ হয়ে যায় এক তৃণমূল নেতার বাড়ি। তৃণমূলের বুথ সভাপতি-সহ ৩ জনের ঝলসানো মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনার তদন্ত করছে NIA। সেই তদন্তের স্বার্থেই  দুই তৃণমূল নেতাকে একাধিকবার তলব করা হয়। কিন্তু তাঁরা তলবে সাড়া দেননি।  তলব এড়ানো এই দুই তৃণমূল নেতা, কর্মীকেই গ্রেফতার করে NIA। আর তারপরই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় তাদের। সকাল ৬টা নাগাদ তাদের গাড়িতে হামলা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই চলে ইট, পাথরবৃষ্টি। ভেঙে দেওয়া হয় NIA-র গাড়ির কাচ। 


এই হামলার ঘটনায় প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে NIA। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, ২০২২-র ওই ঘটনায় ভূপতিনগরের ৫টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। শনিবার গ্রেফতার করা হয় দুই ষড়যন্ত্রকারী বলাইচরণ মাইতি ও মনোব্রত জানাকে। NIA-র দাবি, ধৃতদের থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। মনোব্রতর বাড়ির সামনে হামলায় এক NIA আধিকারিক আহত হন। NIA-র গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রেস বিবৃতিতে NIA-র দাবি, ২০২২-এর ডিসেম্বরে বিস্ফোরণে একটি বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মৃত্যু হয় তিনজনের। সন্ত্রাস তৈরির জন্য দেশি বোমা বানানো হচ্ছিল। পুলিশ মামলা রুজু করলেও, বিস্ফোরক আইনের ধারা যুক্ত করা হয়নি। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার নেয় NIA।যুক্ত করা হয় বিস্ফোরক আইনের ধারা। ওই ঘটনায় ধৃত বলাইচরণ ও মনোব্রতর প্রত্যক্ষ যোগ ছিল বলে প্রেস বিবৃতিতে দাবি করেছে NIA।