সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: বয়স যে কোনও বাধাই নয় তা অনেক ঘটনাতেই প্রমাণ পাওয়া যায়। এবার যমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী করলেন অশোকনগরের (Asokenagar) এক বৃদ্ধ দম্পতি। বলিউডে 'বধাই হো' সিনেমারটির গল্প মনে আছে?  যেখানে এক বয়স্ক দম্পতির বাবা-মা হওয়া নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবারের মধ্যে মানসিক অশান্তির বিষয়টি দেখানো হয়েছে। তেমনই এক গল্পের মতোই ঘটনা দেখা গেল অশোকনগরে। বৃদ্ধ বয়সে যমজ সন্তানের জন্ম দিলেন ওই দম্পতি। 


কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত? জানা যায়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল একমাত্র ছেলে অনিন্দ দত্তের। তারপরেই সন্তান শোকে দিশেহারা হয়ে পড়েন দত্ত দম্পতি। সময় যত এগোয় একাকীত্ব ও মানসিক কষ্ট তাদের ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকে। এরপরই সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তপন দত্ত (৭০) এবং রূপা দত্ত (৫৪)। 


বয়সের বাধাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এই দম্পতি তাঁরা দুজনে সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা আবার সন্তানের জন্ম দেবেন। আগামী দিনে বেঁচে থাকার ভরসা হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তাঁরা। কিন্তু তাঁদের বাধা হয়ে দাঁড়ায় একাধিক শারীরিক অসুবিধা। সেই সময় হাওড়া জেলার বালি এলাকার এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এই দম্পতি। তাঁর পরামর্শেই শুরু হয় চিকিৎসা। যদিও বয়সের ভার বাধা হয়েছে প্রতিপদেই। গর্ভধারণ করার পর একাধিক শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হন মা-রূপা দত্ত।


আরও পড়ুন, 'পয়সা হয়তো আসছে না, তাই বন্ধ হুক্কা বার', রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিলীপের


কিন্তু এরপরই হয় বিপত্তি। প্রসবের সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে সেই সময় যে ডাক্তার তাদের চিকিৎসা করতেন, সে আর পারবেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সময় পেরিয়েছে, ফলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতেই হয়েছে ওই দম্পতিকে। কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে আলোচনা করে এবং সেখানেই একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে জমজ শিশুর জন্ম দেয় বৃদ্ধ দম্পতি।


অক্টোবর মাসের দশ তারিখ এই শিশুর জন্ম দেন তাঁরা। নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ অর্থাৎ বুধবার শিশুদের নিয়ে তাদের অশোকনগর কাকপুল নয়া সমাজের বাড়িতে আসে বাবা ও মা । সুস্থ আছেন দম্পতি ও শিশুরা। পরিবারের অন্যান্য লোকজন তাদের ফুল ছিটিয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে বরণ করে নেয়। 


স্থানীয়দের দাবি, এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। পুত্র শোকের যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন জানালেন শিশুদের বাবা তপন দত্ত। মানসিক যন্ত্রণার কষ্ট থেকে বাঁচতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। শিশুদের জন্মের পর খুশি মা রূপা দত্তও। বয়সের বাধা পেরিয়ে, বহু কষ্ট পেরিয়ে, অবশেষে আনন্দের হাসি হাসলেন তিনি।