সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: কামদুনি গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর। এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল। কেন এখনও সাজা পেল না অপরাধীরা? প্রশ্ন তুলে মিছিল এলাকাবাসীর। মিছিলের সামিল হন  বিশিষ্টজনরাও। 


ঘটনার ১০ বছর পূর্তির দিনে ফের দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হল কামদুনির নির্যাতিতার পরিবার। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরাও। বর্ষপূর্তিতে বুধবার কামদুনিতে মিছিল ও সভার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, সিপিএম নেত্রী রমলা চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী, সমাজ কর্মী শ্বাশতী ঘোষ প্রমুখ।   


দশ দশটা বছর পেরিয়ে গেল। কিন্তু, কামদুনির লড়াই আজও শেষ হল না। আজও শেষ হল না, কলেজ ছাত্রীর গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষীদের শাস্তির অপেক্ষা। বুধবার ভয়াবহ কামদুনিকাণ্ডের এক দশক পূর্তির দিনে ফের দোষীদের শাস্তি কার্যকরের দাবিতে, আন্দোলনের ডাক দিয়ে সুর চড়াল কামদুনিবাসী। ২০১৩ সালের ৭ জুন এক নৃশংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে, শিরোনামে উঠে এসেছিল উত্তর ২৪ পরগনার অখ্য়াত জনপদ কামদুনি। 


এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে সেখানে। ঘটনায় ৮ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তদন্তভার যায় সিআইডি-র হাতে। ২ বছরের বেশি মামলা চলার পর, রায় দেয় নগর দায়রা আদালত। অভিযুক্ত ৬ জনকে দোষী সাব্য়স্ত করা হয়। তথ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করা হয় ২ জনকে। ২০১৬-র জানুয়ারিতে কামদুনির গণধর্ষণ, খুনের মামলায় সাজা ঘোষণা করে নগর দায়রা আদালত।


৩ জনকে মৃত্য়ুদণ্ড এবং ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় দোষীরা ওই রায়কে চালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যায়। সেই মামলা এখনও চলছে। নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজাও কার্যকর হয়নি। 


কামদুনির আন্দোলনকারী মৌসুমি কয়ালের দাবি, ১৫ দিনে চার্জশিট ও ৩০ দিনে সাজা ঘোষণা হবে। এখন দীর্ঘ ১০টা বছর পার করে ফেললাম। এখনও দোষীদের সাজা কার্যকর করে উঠতে পারলেন না। সরকারি উকিল দেওয়া হচ্ছে। পিছন থেকে নেতারা হুমকি দিচ্ছে। 


প্রতিবছর এই ৭ জুন দিনটা এলেই, কামদুনিবাসীকে গ্রাস করে যন্ত্রণা। যেন পুরনো ক্ষত কেউ খুঁচিয়ে দিয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ দশটা বছর কেটেছে এভাবেই। বুধবার কামদুনিকাণ্ডের এক দশক পূর্তির দিনে, কামদুনিতে মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, সিপিএম নেত্রী রমলা চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী, সমাজ কর্মী শ্বাশতী ঘোষ প্রমুখ। 


কংগ্রেস নেতা  কৌস্তভ বাগচী বলছেন, এই যে কামদুনির ঘটনা কোথাও আমরা ভেবেছিলাম যে রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ারেস়্ট হয়ে থাকবে। আর কোথাও ঘটবে না। কিন্তু, এর থেকে যে আমরা শিক্ষা নিইনি সেটা বারবার প্রমাণ হচ্ছে শাসনহীন বাংলায়।


সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের কথায়, আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি শাস্তি আদায়ের জন্য লড়তে হবে। কিন্তু, শাস্তি আদায় কঠিন হবে। আদালতে বার বার সরকার পক্ষের আইনজীবী বদলে গেছে। সাম্প্রতিককালের অন্য় কোনও মামলায় এমন সরকারি আইনজীবী বদলে গেছে। বদলেছে কেন? নতুন কেউ আসবেন। তিনি জানেন না। মামলা বিলম্বিত হবে। শেষ দেখে ছাড়বই।


এ দিন মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহত নির্যাতিতার প্রতি শ্রদ্ধাও জানানো হয়। কিন্তু, যে অপেক্ষায় তাঁরা দিন গুনছেন, তার শেষ কোথায়? সেটাই জানতে চান কামদুনিবাসী।