সমীরণ পাল,উত্তর ২৪ পরগনা: গাইঘাটার ঠাকুরনগরের শিমুলপুর থেকে অপহৃত নাবালিকা দুই ভাই-বোনকে বিহার নেপাল সীমান্তের রক্সৌল থেকে উদ্ধার করল গাইঘাটা থানার পুলিশ।অপহরণের ২১ দিন পর, গাইঘাটা থানার পুলিশের বিশেষ দল উদ্ধার করে নিয়ে আসে তাঁদের। শিশুদের পরিবারের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে বিহার একটি পাচার চক্রের  হাতে তুলে দেওয়া হয় । ঘটনায় ইতিমধ্যে  এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে গাইঘাটা থানার পুলিশ।


আজ আদালতে গোপন জবানবন্দি


ধৃত মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। মোবাইলে একটি ফোন আসে তাতে বলা হয় যে, ট্রেনের টিকিট কেটে এই নাম্বারে পাঠানোর জন্য । সেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই গোটা ঘটনার কিনারা করেছে গাইঘাটা থানার পুলিশ । উদ্ধার হওয়া শিশুদের আজ বনগাঁ আদালতে গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। গাইঘাটার আরো এক মহিলার পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাকে খুঁজছে পুলিশ।


কীভাবে উদ্ধার গাইঘাটার নিখোঁজ নাবালিকা ভাই-বোন ?


৫০০ টাকার অনলাইন লেনদেনের সূত্র ধরে ২০ দিন পরে নেপাল সীমান্ত থেকে উদ্ধার গাইঘাটার নিখোঁজ নাবালিকা ভাই-বোন। বাবা মায়ের দাবি,  নাচ এবং দেহ ব্যাবসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দোষীদের শাস্তি চাই। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ সন্ধ্যায় গাইঘাটা শিমুলপুর পঞ্চায়েতের বনিকপাড়া এলাকা থেকে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় ১৩ বছরের এক নাবালিকা ও ১০ বছরের এক নাবালক ভাই-বোন। ওইদিনই গাইঘাটা থানা দারস্থ হয় তাদের পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ পেয়ে গাইঘাটা থানার পুলিশ তদন্ত নেমে বিহার নেপাল সীমান্তের রক্সৌল থেকে তাদের উদ্ধার করে।


সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঠাকুরনগরের এক যুবতীকে আটক


পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্ত নেমে প্রথম দিকে কোন সূত্র না পেলেও এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঠাকুরনগরের এক যুবতীকে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একটি ৫০০ টাকার অনলাইন লেনদেনের সূত্র পায় পুলিশ। তারপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আর সেই সূত্র ধরে গাইঘাটা থানার পুলিশের ৪ সদস্যের একটি দল বিহারে পাড়ি দেয়। সেখানে নেপাল বিহার সীমান্তের রক্সৌল এলাকায় তাদের সন্ধান পায়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে আজ ভোরে গাইঘাটা থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ সূত্রে আরো জানা গিয়েছে, বাচ্চা দু'টি গত দুবছর ধরে তার সৎ মা এবং বাবার সঙ্গে থাকতেন। বিভিন্ন সময়ে তার বাবা-মা বাচ্চার দুটিকে মারধর করতে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। আর সেই অভিমানেই বাড়ি ছেড়েছিল বাচ্চা দুটি।


আরও পড়ুন, শোভনদেবের 'ভাইরাল' বক্তব্যে 'পচা আলুর' কনসেপ্ট বোঝালেন রাহুল-সুজন


'গাইঘাটা পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ'


পরিবারের দাবি, এক তারিখে সকালে কাজে বেরিয়ে যায় উদ্ধার হওয়া বাচ্চার বাবা এবং দুপুরে কাজে বেরিয়ে যায় তার সৎ মা। বাড়িতে তখন তারা তিন ভাইবোন ছিলেন। সন্ধ্যায় তার ছোট ছেলের কাছ থেকে জানতে পারে নাবালিকা দুই ভাই বোন কোনও এক মেয়ের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। তারপরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে গাইঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। 
বাচ্চার বাবা এবং সৎ মায়ের দাবি, তারা বাচ্চা দুটিকে খুব ভালবাসতেন, কখনোই মারধর করতেন না। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, আর্থিক অনটনে অনেক সময় এইসব বাচ্চারা বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং বিক্রি হয়ে পাচার হয়ে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে, তারপরও অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ এবং বাচ্চা-পাচার রোধ করা যাচ্ছে না। এবং গাইঘাটা পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি ।