ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: হেরিটেজ ভবন ভাঙা নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই কড়া সিদ্ধান্ত নিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Rabindrabharati University) কার্যনির্বাহী কমিটি। সাসপেন্ড করে দেওয়া হল তৃণমূল (TMC) নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-সহ তিনজনকে। গতকাল ক্যাম্পাসে ঢুকল পুলিশও।


রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Rabindrabharati University) জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে, অবৈধ নির্মাণ নিয়ে চলা চাপানউতোরের মধ্যেই, বৃহস্পতিবার কড়া সিদ্ধান্ত নিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী সমিতি। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিক্ষাকর্মী ও তৃণমূল নেতা-সহ তিনজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার পরেরদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হল বিশাল পুলিশ বাহিনী।


অন্যদিকে, ক্যাম্পাসে মিছিল করল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। কিন্তু রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হঠাত্‍ করে পুলিশ ঢুকল কেন? সিঁথি থানা সূত্রে দাবি, অশান্তির আশঙ্কাপ্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। সেইজন্যই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। 


জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে হেরিটেজ ভবন ভেঙে তৃণমূলের শিক্ষা সংগঠনের কার্যালয় তৈরির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায়, হেরিটেজ ভবন ভাঙায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর থেকেই উপাচার্যের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনের টানাপোড়েন চলছে।


এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী সমিতি বৈঠক করে, তৃণমূল নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সুবোধ দত্ত অধিকারী, দেবপ্রসাদ ঘোষ এবং রাজকুমার ঝা-কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি অভিযোগ ওঠা, বিশ্বজিত্‍ দে ওরফে বাপ্পাকেও ক্যাম্পাসে ঢুকতে  নিষেধ করা হয়েছে। আর এরপরের দিনই পুলিশ ঢুকে পড়ল ক্যাম্পাসে!


রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর কথায়, গতকাল সমিতির বৈঠক ছিল। কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ক্যাম্পাসে আগামীকাল থেকে পুলিশ আর থাকবে না। যদিও এবিষয়ে তৃণমূলের কর্মচারী সমিতির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। 


রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Rabindra Bharati UNiversity) জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসের (Jorasanko Campus) হেরিটেজ ভবন (Heritage Building) ভাঙার কাজে স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই নির্দেশের পরও কাজ চললে জবাবদিহি করতে হবে রাজ্যকেই। হুঁশিয়ারি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের।


কাঠগড়ায় শাসকদলের শিক্ষাকর্মী সংগঠন ! কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত হেরিটেজ ভবন ভেঙে তৈরি হচ্ছিল শাসকদলের শিক্ষাকর্মী সংগঠনের অফিস ! রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। আর এই প্রেক্ষিতেই হস্তক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট। অবিলম্বে হেরিটেজ ভবন ভাঙার কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় আদালত।


জোড়াসাঁকোর হেরিটেজ ভবনের অব্যবহৃত ঘর ভেঙে দেওয়ার অভিযোগে ৩ নভেম্বর হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন স্বদেশ মজুমদার নামে এক ব্যক্তি।মামলাকারী অভিযোগ তোলেন, এই হেরিটেজ ভবনের দুটি ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। যে ঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমবার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ঐতিহাসিক সেই ঘর তৃণমূলের শিক্ষাকর্মী সংগঠন শিক্ষা বন্ধু সমিতির অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকী সেখানে কবিগুরুর ছবি সরিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ছবি টাঙানো হয়েছে।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থানে, হেরিটেজ ভবন ভাঙা অবিলম্বে বন্ধ করার আবেদন করেন মামলাকারীর আইনজীবী। সোমবার,  প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে হেরিটেজ ভবন আর ভাঙা যাবে না। এই নির্দেশের পরেও যদি কাজ চলে, জবাবদিহি করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। কার নির্দেশে হেরিটেজ ভবন ভাঙা হচ্ছিল ? আদৌ কি অনুমতি নেওয়া হয়েছিল ? বিস্তারিত জানতে চেয়ে রাজ্য সরকার ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে ২১ নভেম্বর রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওইদিনই মামলার পরবর্তী শুনানি।