সমীরণ পাল, হাবরা: মৃতদেহ দাহ করতে গিয়ে শ্মশানে উদ্ধার টাকাভর্তি ব্যাগ। মৃতের বালিশের মধ্যে লুকনো ছিল কড়কড়ে ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল। আগুনে ফেলার আগে নজরে পড়েনি কারও। যখন নজর পড়ল, তত ক্ষণে অর্ধেক প্রায় পুড়ে ছাই। একটু একটু করে যে টাকা জমিয়েছিলেন মৃত ব্যক্তি, তার অর্ধেকেরও কম ঘরে এল শেষ মেশ, তাও হাজার কাঠখড় পোড়ানোর পর। (Habra News)


উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ঘটনা। সেখানে শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করতে গিয়ে বালিশের মধ্যে থেকে টাকার ব্যাগ উদ্ধার করলেন মৃতের পরিজনরা। তবে গত এক বছরে রাজ্যবাসী দুর্নীতির কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উদ্ধার হতে দেখেছেন যেভাবে, এই টাকা তেমন নয়। বরং মেহনতি মানুষের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকা। সন্তর্পণে জমিয়ে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি গোপন রাখাতেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল তার অর্ধেকের বেশি। (North 24 Parganas News)


হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে টাকার মুখ দেখা। সংসার খরচ চালিয়ে বাঁচে না প্রায় কিছুই। তার মধ্যে থেকেই ১০-২০ টাকা জমানোর চেষ্টা করেন সাধারণ খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত মানুষ। মোড়ে মোড়ে ব্যাঙ্ক গজিয়ে উঠলেও, ওই পরিমাণ টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে যাওয়ার ঝক্কিতে যান না অনেকেই। মুড়ির টিন, বিস্কুটের কৌটোয় সন্তর্পণে রেখে দেন।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: SSKM-এ ভুল চিকিৎসা মমতার! মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য


সেই মতোই নিজের মাথার বালিশে জমানো টাকা রেখে দিয়েছিলেন বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা নিমাই সর্দার। ভ্যান টনে সংসার চালাতেন তিনি। অনেকটা টাকা জমলে বাকিদের জানাবেন ভেবেছিলেন হয়ত। কিন্তু সেই জানানো আর হল না। তার আগেই রবিবার মৃত্যু হয় তাঁর। তিন মেয়ে, তাই মুখাগ্নি করতে শ্মশানে যান ভাইপো পঞ্চানন সর্দার। তিনিই কাকার বালিশ থেকে টাকা উদ্ধার করেন।


পঞ্চানন জানিয়েছেন, স্থানীয় শ্মশানেই দেহ সৎকার করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। বিধি মেনে চিতায় তোলা হয় নিমাইয়ের দেহ। পরে মনে পড়ে, মৃতের বালিশ এবং বিছানাও পুড়িয়ে দিতে হয়। সেই মতো নিমাইয়ের বালিশ-বিছানা এনে আগুনে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু পরেই পঞ্চাননের নজরে পড়ে, আগুনের শিখার মধ্যে ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল দেখা যাচ্ছে। 


সঙ্গে সঙ্গে আগুন থেকে টেনে ওই বালিশ নামিয়ে ফেলেন পঞ্চানন। দেখা যায়, বালিশের মধ্যে একটি ব্যাগ রয়েছে। তার মধ্যে রাখা আছে ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল। সব মিলিয়ে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু অধিকাংশ নোটই আধপোড়া হয়ে গিয়েছে তখন। সেই আধপোড়া নোটের বান্ডিল নিয়ে হাবরা চলে আসেন পঞ্চানন। একাধিক ব্যাঙ্কে গেলেও, টাকা পাল্টানো যায়নি।


এর পর, পঞ্চাননের দিদির বাড়ির কাছে এক ব্যক্তির হদিশ মেলে। তিনি টাকা পাল্টে দেওয়ার কারবার করেন। সটান তাঁর কাছে চলে আসেন পঞ্চানন। জামাইবাবুকে নিয়ে খোকন ঘোষ নামের ওই কারবারির খোঁজ শুরু করেন। শেষে হাবরা হাটথুবা এলাকায় খোঁজ মেলে খোকনের। সব দেখে খোকন জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মূল্য অনুযায়ী আধপোড়া ওই নোটের বান্ডিল থেকে ৭৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। তা থেকে তাঁর লাভ হবে ৩৫০ টাকা। ১৬০০০ না হলেও, ৭৫০০ টাকা উদ্ধার করতে পেরেও খুশি পঞ্চানন। কাকার জমানো টাকা তাঁর শ্রাদ্ধের কাজে লাগবে বলে বলে জানান তিনি।