শিলিগুড়ি: একরাতে প্রায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি। পুজোর আগে দক্ষিণবঙ্গে যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল, পুজো মিটতে সেই পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গে। জলমগ্ন বহু এলাকা, জাতীয় সড়ক-সহ বিভিন্ন রাস্তায় ধস নেমেছে। সমতল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পাহাড়। কোচবিহারের মাথাভাঙা, দিনহাটা, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা, ধূপগুড়িও জলমগ্ন। জল ঢুকে গিয়েছে সাধারণ মানুষের বাড়িতে। জল জমে রয়েছে রেললাইনেও। এমন পরিস্থিতিতে রেল পরিষেবাও বিপর্যস্ত। (North Bengal Situation)
রেল সূত্রে খবর, ডুয়ার্সের মালবাজার থেকে যে ট্রেন চলাচল করে, সেগুলিকে ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। কাঞ্চনকন্যা, মহানন্দা এক্সপ্রেস ঘুরপথে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার যাচ্ছে। এই সময় পাহাড়ে পর্যটকদের ঢল নামে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে পর্যটকদের একাধিক ট্রেন বাতিল করার ভাবনা-চিন্তা চলছে। কারণ বিভিন্ন জায়গায় রেললাইনই জলের তলায় চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ট্রেন বাতিলও করা হয়েছে। ঘুরপথে চালানো হচ্ছে কিছু ট্রেন। (North Bengal Floods)
প্রবল বৃষ্টির জেরে এদিন বানারহাটেও রেললাইনে জল জমে রয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ডুয়ার্সগামী উত্তর-পূর্ব রেলের একাধিক ট্রেন। বদল করা হয়েছে একাধিক ট্রেনের রুট। বাতিল হয়েছে ১৫৭৭৭ নিউ জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেন। রুট পরিবর্তন করা হয়েছে শিয়ালদা-আলিপুরদুয়ার এক্সপ্রেসের। আলিপুরদুয়ার-দিল্লি রুটের মহানন্দা এক্সপ্রেসেরও রুট পরিবর্তন করা হয়েছে।
পাহাড়ে বৃষ্টির সতর্কতা ছিলই। লাল সতর্কতাও জারি করা হয়েছিল একাধিক জায়গায়। সেই আবহেই গতকাল রাতে অতি ভারী বৃষ্টি হয় সেখানে। কোচবিহারেই ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তোর্সা নদী, মাথাভাঙার মানসাই নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। জলস্তর বিপদসীমার উপরে তিস্তা, মহানন্দারও। নদী-রাস্তাঘাট সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন স্থানীয় মানুষজনকে বাইরে বেরোতে নিষিদ্ধ করেছে। উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। পৌঁছচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।
কিন্তু উদ্ধারকার্য চালাতে গিয়েও কাজ ব্যহত হচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় দ্রুত কাজ সারা যাচ্ছে না। মিরিকে ইতিমধ্যেই ধসে চাপা পড়ে দুই শিশু মারা গিয়েছে। ধসে এখনও কয়েক জন চাপা পড়ে রয়েছেন বলে আশঙ্কা। GTA-র তরফে পর্যটনস্থলগুলি আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হোটেলের ঘর থেকে বেরোতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সকলকে।
তবে আশঙ্কার মেঘ কাটছে না। কারণ আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। প্রশাসনের তরফে সেচ দফতর এবং পুলিশ সতর্ক রয়েছে। স্থানীয়দের নদীর আশেপাশে যেতে বারণ করা হয়েছে। জলমগ্ন এলাকায় বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করতে চলছে মাইকিং। কিন্তু জল বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত রেল পরিষেবা।